ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালী উপজেলার একটি পাটকল দখল করে দেওয়ার দায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পাটকলটির নাম দাহমাশী জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
মামলা করেছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির, যিনি দাহমাশী জুটেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার এ মামলা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১–এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হক, দাহমাশী জুটের চেয়ারম্যান নোমান চৌধুরী ও তাঁর ছেলে কোম্পানির পরিচালক সালমান চৌধুরী, কোম্পানির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) আবদুর রাজ্জাকসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ১ নম্বর আসামি নোমান চৌধুরী এবং বাদী মনিরুজ্জামান মনির ও তাঁর ছেলে কোম্পানির পরিচালক মেহেদী জামান সনেট মিলে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল দাহমাশী জুট ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২০ সালের ২০ জুন নোমান চৌধুরীর ছেলে ২ নম্বর আসামি সালমান চৌধুরী পরিচালক হিসেবে কোম্পানিতে নিয়োগ পান। ওই বছরই নোমান চৌধুরী ও সালমান চৌধুরী কোম্পানির মালিকানা এককভাবে নিতে মামলার বাদীকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।
আরজিতে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও নোমান চৌধুরীর নির্দেশে র্যাবের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার নাজমুল হক ও অন্যরা মিলে বাদী মনিরুজ্জামান মনির ও তাঁর ছেলে মেহেদী জামান সনেটকে তাঁদের নিজ বাসার নিচ থেকে জোর করে নিয়ে যায়। কালো কাচে ঢাকা মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত জায়গায় আটক রাখা হয় এ দুজনকে।
আরজিতে বলা হয়, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বাদী ও তাঁর ছেলেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন আসামিরা। পাশাপাশি তাঁরা এমন হুমকি দেন যে পুরো কোম্পানির মালিকানা লিখে না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে খুন করে তাঁদের লাশ গুম করে ফেলা হবে। বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের মুখে বাধ্য হয়ে বাদীপক্ষ তখন একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। আইন অনুযায়ী বিষয়টি এখন এগোবে।’
দাহমাশী জুট ইন্ডাস্ট্রিজ দখল হওয়া নিয়ে ২০২১ সালের ৯ জুলাই প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে যেভাবে একটি পাটকল দখল’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এদিকে নোমান চৌধুরী চক্রের কীর্তিকলাপের কথা জানিয়ে এবং এ থেকে প্রতিকার পেতে মনিরুজ্জামান মনির ২০২১ সালের ১৩ জুন পুলিশের তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদকে লেখা একটি চিঠিতে বলেছিলেন, ‘নোমান চৌধুরী বারবার হুমকি দিতে থাকেন এই বলে যে প্রশাসনের অনেক উচ্চপর্যায়ে তাঁর যোগাযোগ আছে এবং কোম্পানি লিখে না দিলে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করে নোমান চৌধুরীর নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পরদিন গত ৬ আগস্ট রাতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
দাহমাশী জুটের শেয়ার জোরপূর্বক লিখে নেওয়ার সময় নাজমুল হক ছিলেন র্যাব–১–এর জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার। তিনি এখনো র্যাব–১–এ আছেন। মাঝখানে পদোন্নতি পেয়ে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হয়েছেন।
যোগাযোগ করলে মনিরুজ্জামান মনির গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এত দিন মামলাও করতে পারিনি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায্য বিচার প্রতিষ্ঠা পাক—এটাই আমার চাওয়া।’