টানা তিন দিন বন্ধের পর আজ বুধবার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা চালু হয়েছে। তবে অনেক কারখানাতেই শ্রমিকেরা এসেও কাজ না করে বের হয়ে যান। কিছু এলাকায় হামলা ও ভাঙচুরের আতঙ্কে কারখানা বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তাঁরা আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তা কারখানা খোলেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া-বাইপাইলের হা-মীম, শারমীন গ্রুপসহ কয়েকটি ছাড়া অন্য কারখানাগুলো সকালে চালু হয়। শ্রমিকেরাও আসেন। তবে শ্রমিকেরা যেসব কারখানা চালু হয়নি, সেগুলোর উদাহরণ দিয়ে বলতে থাকেন, তাঁরা কাজ না করলে আমরা কেন করব? একপর্যায়ে শ্রমিকেরা কাজ না করে বের হয়ে যান। এভাবে আশুলিয়া-বাইপাইলের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, মাওনা ও মৌচাক এলাকায়ও অনেক কারখানা চালু হলেও পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বৈঠক করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে আশুলিয়ায় শেষ পর্যন্ত বড় কয়েকটি কারখানা না খোলায় তার আশপাশের অনেক কারখানা চালু করার পরও বন্ধ করতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। অনেক জায়গায় আবার নিরাপত্তাজনিত বিষয়েও কারখানা চালাতে পারেননি মালিকেরা। তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ কার্যালয়ে আজ বিকেলে সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে কারখানা খোলার বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তুসুকা গ্রুপের গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার কারখানাগুলো আজ চালু হয়নি। জানতে চাইলে গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েই কারখানা চালু করিনি। কারণ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আমাদের মতো অনেকেই আজ কারখানা খোলেননি। আবার অনেকে খুলেও বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।’
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো আজ সকাল থেকে চালু হয়। কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতিও ভালো দেখা গেছে।
জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানা চালু হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তৈরি পোশাক কারখানার মতো অনেক বস্ত্রকলও আজ সকালে চালু করে শেষ পর্যন্ত বন্ধ করতে বাধ্য হন মালিকেরা। এর মধ্যে একটি কারখানা সাভারের জামগড়া এলাকার লিটল স্টার স্পিনিং মিল। এ কারখানা আজ সকাল ছয়টায় উৎপাদন শুরু করে। পরে স্থানীয় কিছু লোক হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন খবর পাওয়ার পর কারখানা বন্ধ করে লিটল স্টার স্পিনিং মিল কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লিটল স্টার স্পিনিং মিলের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আমাদের একটি স্পিনিং মিলে উৎপাদন চললেও সাভারে স্পিনিং মিল তিন ঘণ্টা চালানোর পর বন্ধ করতে হয়েছে।’
জানতে চাইলে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, উদ্যোক্তাদের কেউ কারখানা খুলেছেন। আবার কেউ খোলেননি। যাঁরা খুলেছেন, তাঁদের অনেকে আবার হামলার আশঙ্কায় বন্ধ করেছেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক রয়েছে। কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক করতে হলে আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কারখানা চালু করা সম্ভব নয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিজিএমইএর নেতারা বৈঠক করেন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংগঠনের সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, মো. নাছির উদ্দিন, পরিচালক শোভন ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও বিটিএমএর সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী অংশ নেন। বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিজিএমইএ এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (আজ) তৈরি পোশাক কারখানা চালু করার কথা জানায়। তার আগেই বিকেএমইএ আজ বুধবার থেকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত জানায়।