চালু হচ্ছে কারখানা

পানির কলে আকিজের বড় বিনিয়োগ

পানির কলের বাজারে দেশীয় বড় বিনিয়োগ কম। ৫১ শতাংশই বিদেশি পণ্যের দখলে। বাজার ধরতে আকিজ বাথওয়্যার বড় বিনিয়োগ করেছে।

নগরায়ণের ফলে দেশের বড় বড় শহরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন। পিছিয়ে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলও। বাড়ি বা ভবন নির্মাণে ইট, বালু, সিমেন্ট পাথর যেমন লাগে; তেমনি বেসিন, রান্নাঘর ও স্নানঘরে দরকার হয় পানির কলের, যা পানির ট্যাপ নামে পরিচিত। চাহিদা থাকলেও দেশে এত দিন পানির কলের বড় কোনো ব্র্যান্ড ছিল না।

দেশীয় কয়েকটি কোম্পানি এ বাজারে থাকলেও উন্নত মানের বেশির ভাগ পানির কল বিদেশ থেকে আমদানি হয়। ফলে এ বাজারের বড় একটি অংশই আমদানিনির্ভর। প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে এ বাজারটি। আর তাই পানির কল তৈরির কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এ বাজারে যুক্ত হতে যাচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ বাথওয়্যার। এটি আকিজ গ্রুপেরই একটি প্রতিষ্ঠান।

বাথওয়্যার তৈরির কারখানা স্থাপনে এরই মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি। আগামীকাল বুধবার নতুন এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত শুরু হবে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে এ কারখানাটি গড়ে তোলা হচ্ছে।

‘এখন পর্যন্ত এ বাজারে বিদেশি পণ্যের দাপট বেশি। তাই আমাদের লক্ষ্য পানির কলের বাজারে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা আশা করছি, আমাদের তৈরি পণ্য দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে।’
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ব্যবসা)

খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর পানির কল (ট্যাপ, ওয়াশার, ঝরনা) ও স্নানের পোশাক রাখার স্ট্যান্ডের বাজারটি প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। এই বাজারের ৫১ শতাংশের বেশি আমদানি করা বাথওয়্যারসামগ্রীর দখলে। বাকিটা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে। তবে বাজারে ব্র্যান্ডের বাথওয়্যারসামগ্রী হাতে গোনা।

বর্তমানে এ বাজারে উল্লেখযোগ্য ব্রান্ডের মধ্যে রয়েছে শরিফ, সাত্তার, তানভীর, আরএফএল ও রাজা। দেশের প্রতিষ্ঠিত বড় শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে এই বাজারে প্রথম প্রবেশ করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এখন নতুন করে আকিজ বাথওয়্যার বড় বিনিয়োগ নিয়ে আসছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, নতুন কারখানায় তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ ৫০০ কোটি টাকার মতো। ক্রমান্বয়ে বাড়বে এ বিনিয়োগ।

আকিজের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি মাসে তাঁদের কারখানায় ৬০ হাজার পিস পানির কল, ওয়াশার, ঝরনা ও স্নানের পোশাক রাখার স্ট্যান্ড তৈরি হবে। আকিজ বাথওয়্যারের কারখানায় কর্মসংস্থান হবে ৫০০-এর বেশি শ্রমিকের।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (ব্যবসা) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বাজারে বিদেশি পণ্যের দাপট বেশি। তাই আমাদের লক্ষ্য পানির কলের বাজারে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা আশা করছি, আমাদের তৈরি পণ্য দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে।’

কোম্পানি–সংশ্লিষ্টরা জানান, পানির কল তৈরিতে জার্মানি ও জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। কারখানাটি হবে স্বয়ংক্রিয়। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি রোবটনিয়ন্ত্রিত থাকবে। বর্তমানে দেশের বাজারে যেসব পানির কল পাওয়া যায়, সেগুলোতে রঙের কোনো বৈচিত্র্য নেই। তাই রঙের বৈচিত্র্য আনতে আকিজের কারখানায় কয়েক রঙের পানির কল তৈরি করা হবে।

প্রতিষ্ঠানটি আকিজ সিরামিকের রোসা ব্র্যান্ড নামেই এসব বাথওয়্যারসামগ্রী বাজারজাত করবে। প্রাথমিকভাবে বছরে ২০০ থেকে ২২০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কোম্পানিটি। ভবিষ্যতে সেন্সরযুক্ত পানির কল বানানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। নতুন কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কারখানায় তৈরি হওয়া বাথওয়্যার সামগ্রীর দরদাম চূড়ান্ত করা হয়নি।

তবে দেশের বাজারে বর্তমানে উন্নত মানের একেকটি পানির কলের দাম ১ থেকে ৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আবার যেসব কলে ঠান্ডা ও গরম পানি একসঙ্গে সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোর দাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে পানির কলের ধরন ও প্রযুক্তির বিবেচনায় দামের হেরফের রয়েছে।

আকিজ বাথওয়্যারের ব্র্যান্ডপ্রধান গোলাম রাব্বানি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) আমরা নতুন এ কারখানা চালু করতে যাচ্ছি। আমরা দেখেছি নগরায়ণের প্রভাবে প্রতিবছর এ বাজারটির প্রবৃদ্ধি রয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। বাজারটি যেহেতু বড় হচ্ছে, তাই গুণগত মানের পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা এ খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিরামিকের ব্যবসার সফলতা আমাদের নতুন এই বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছে।’

ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী, বাহারি নকশার পানির কল রয়েছে বাজারে। যার কোনোটি দেখতে জিরাফের গলার মতো লম্বা বাঁকানো। আবার কোনোটি গোলাকৃতির। সাম্প্রতিক সময়ে ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে পানির কলের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা দামি হোটেল-রিসোর্টে ব্যবহারের জন্য অত্যাধুনিক ডিজাইনের পানির কল চীন, তাইওয়ান, ইতালি, জার্মানি, কোরিয়া, ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়।