দেশের ‘হস্তশিল্প’কে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশের ‘হস্তশিল্প’কে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হস্তশিল্পকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখায় এ খাতে বিশেষ নজর দিতে হস্তশিল্পকে ‘বর্ষপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি। কারণ, এটি নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করে তুলছে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। হস্তশিল্প দারিদ্র্য বিমোচনেও অবদান রাখছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। রাজধানীর উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে।

প্রতিবারই কোনো না কোনো পণ্যের প্রমোশনের জন্য বর্ষপণ্য ঘোষণার রেওয়াজ থাকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি।’

কেন হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য করা হলো তার ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের যে বর্ষপণ্য অর্থাৎ হস্তশিল্পপণ্য সেটি আমাদের নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হবে। যারা গৃহকর্মে নিযুক্ত, তারা গৃহকর্মের পাশাপাশিও কিছু কাজ করতে পারবে। সে কর্মসংস্থানের সুযোগও তাঁদের জন্য সৃষ্টি হবে। আর একটা জাতিকে উঠে দাঁড়াতে হলে, যেখানে আমাদের অর্ধেকই নারী, তাদেরও আমাদের স্বাবলম্বী করতে হবে। নারীদের স্বাবলম্বী করা আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এটা তাদের সহায়ক হবে।’

এ জন্য প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার তৃণমূলে অনলাইন ব্যবহারের শিক্ষা দিচ্ছে; এমনকি সবার হাতে মুঠোফোনও রয়েছে। এ ছাড়া সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে, সেখানেও অনেক সুবিধা রয়েছে। নারীরা বহু পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর সরকার জয়িতা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

একেবারে তৃণমূলের মানুষ যে উৎপাদন করবে, সেটাই তারা বাজারজাত করবে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডে চমৎকার একটি ভবন করে দিয়ে বাজারজাত করার ব্যবস্থাও তিনি করে দিয়েছেন এবং এটি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করে দেবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন যেমন কিছু এনজিও টাকা দেয় তারা (নারীরা) মুড়ি, চিড়া তৈরি করে। তারা শুধু মুড়ি-চিড়া তৈরি করবে কেন, মানুষের এখন খাদ্য চাহিদাও বদলে গেছে। আমাদের নারীদের যদি আমরা প্রশিক্ষণ দিই, তাহলে তারা একদিকে চিড়া, মুড়ি, খইয়ের পাশাপাশি পিঠাপুলি করতে তৈরি করতে পারবে। আচার, ফুচকা, নুডলস, স্পেগেটি—এগুলো তৈরি করা কোনো কঠিন ব্যাপার হবে না। তা ছাড়া পোশাক–পরিচ্ছদ তৈরি করতে পারবে। পোশাক–পরিচ্ছদে এমব্রয়ডারি করা, নানা সুতার কাজ করা সেই সঙ্গে উলের তৈরি করা জিনিস, কাটার কাজ, তামা, কাঁসা, পিতল, মাটি, কাঠ, খড়, গমের ডাঁটা, কাশফুল, কাশফুলের ডাঁটা, বেত, সুপারিগাছের ছাল, পাতা, কচুরিপানা দিয়ে কাগজসহ অনেক পণ্য তৈরি হচ্ছে, কলাগাছের থোড় দিয়ে সুতা বানিয়ে সেটা দিয়ে শাড়ি, আনারসগাছের পাতা থেকেও খুব ভালো সিল্ক তৈরি করা যায়। তা ছাড়া বাঁশসহ অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার করে ঘরে বসেই পণ্য তৈরি করতে পারবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেক কাজ মেয়েদের করার সুযোগ আছে। শুধু তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কখন কোন ধরনের রং, ডিজাইনের প্রয়োজন। আরও একটি বড় প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে অনলাইনে কেনাবেচার ব্যবস্থা করে দেওয়া। ইতিমধ্যে আমাদের শিক্ষা দেওয়া চলছে। এই শিক্ষা আমরা আরও ভালোভাবে দেব, এতে প্রতিটি নারীরই আলাদা কিছু উপার্জন থাকবে। আর উপার্জন থাকলে তার পরিবারে, সমাজে, সংসারে একটা অবস্থান থাকবে। এভাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন তো হবেই, নারীর ক্ষমতায়নেও এই শিল্প যথেষ্ট সুবিধা এনে দেবে।’

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।

অনুষ্ঠানে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় ও বিনিয়োগ আকর্ষণে গত ১৫ বছরে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাতক্ষীরায় একধরনের মাটি পাওয়া যায়, যেটা দিয়ে বিশেষ টাইলস হয় এবং সেটা ইতালিতে রপ্তানি হয়। সেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গেই কাজ করে। এ রকম আমাদের সারা বাংলাদেশের ছড়িয়ে–ছিটিয়ে অনেক পণ্য আছে, যার হয়তো খবরই কেউ রাখে না। সেগুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে এসে তাদের যদি প্রণোদনা দিয়ে প্রশিক্ষিত করা যায়, তাহলে তারা সে কাজটা আরও ভালোভাবে করতে পারবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী এবং আরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যই হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি।’