সাভারের চামড়াশিল্প নগর

চামড়া সংগ্রহ শুরু, শঙ্কা বিক্রি নিয়ে 

ট্যানারিগুলোয় আজ থেকে ঢাকা জেলার লবণযুক্ত চামড়া ঢুকবে। এক সপ্তাহ পর আসবে অন্যান্য জেলার লবণযুক্ত চামড়া। 

লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়ত শ্রমিকেরা। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের আতুরার ডিপো এলাকায়।
জুয়েল শীল

সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরের ট্যানারিগুলো চামড়া সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। এবার তাদের মোট চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি পিস। ট্যানারিমালিকদের সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার পিস চামড়া কিনেছেন তাঁরা।  

ট্যানারিমালিকেরা দাবি করেন, তাঁদের কাছে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারের দাম পাওয়ার সুযোগ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রক্রিয়াজাত চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে তাঁদের নির্ভর করতে হচ্ছে চীনের ওপর। এ কারণে এবারও চামড়ার দাম অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

অভিযোগ উঠেছে, দূরদর্শিতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এবারও চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ ডাম্পিং ইয়ার্ডের (আস্তাকুঁড়ে) বাইরে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় তরল বর্জ্যে এবারও পরিবেশ ও চামড়াশিল্প নগরসংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীতে দূষণের আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল চামড়াশিল্প নগর ঘুরে দেখা যায়, ট্যানারিগুলো সাভার ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে লবণ না দেওয়া চামড়া সংগ্রহ করছে। তারা চামড়া কেনার পর তাতে লবণ দিচ্ছে। কোরবানির পশুর চামড়া থেকে লেজ, কান ও মাথার অংশ কেটে চামড়াশিল্প নগরঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে।

এবার নদীর পাড়ঘেঁষা ডাম্পিং ইয়ার্ডের (আস্তাকুঁড়ে) একটি অংশে বিশাল আকৃতির গর্ত করা হয় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। কিন্তু ওই গর্তের পরিবর্তে বর্জ্য নিয়ে ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়ঘেঁষা উন্মুক্ত স্থানে। সেখানে কয়েকজনকে লেজের অংশ থেকে লোমযুক্ত অংশটি আলাদা করতে দেখা যায়। তেমনই একজন হলেন মঞ্জু মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগে এই অংশটি ৩-৪ টাকায় বিক্রি হতো। এখন ৫০ পয়সার বেশি দেয় না।

সিইটিপির কর্মচারী পরিচয় দিয়ে সেখানে রবিউল ইসলাম নামের একজন বলেন, মূলত যেখানে বর্জ্য ফেলার কথা ছিল সেখানে যাওয়ার সড়কটি বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হওয়ায় গাড়ি যেতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে আপাতত এখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। পরে এগুলো সরিয়ে যথাস্থানে নেওয়া হবে।

এদিকে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে তা থেকে চুইয়ে পড়া তরল বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে মিশে নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে নদীসহ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) অসম্পূর্ণ থাকায় প্রতিবছরই ট্যানারির অপরিশোধিত তরল বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদী দূষিত হয়। কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এবারও দূষণ হবে। কঠিন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

দূষণের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, চামড়াশিল্প নগরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ইতিমধ্যে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি নিয়মিত চামড়াশিল্প নগর পরিদর্শন করছে। কাল (আজ) সোমবার পুনরায় তারা সেখানে যাবে। পরিবেশ দূষণ করতে পারে এমন যেকোনো বিষয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, লবণ দিয়ে সাজিয়ে রাখা চামড়া আজ সোমবার থেকে ভাঙা হবে, মানে খোলা হবে। এরপর ওয়েট ব্লু প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তা ড্রামে রাখা হবে।

চামড়ার ব্যবসা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন কাঁচা চামড়া কাটিং করে লবণ দিয়ে সাজিয়ে রাখছি। কাল (আজ) চামড়ার স্তূপ ভেঙে ওয়েট ব্লুর জন্য ড্রামে দেওয়া হবে। ট্যানারিতে কাল (আজ) থেকে ঢাকা জেলার ভেতরের লবণযুক্ত চামড়া ঢুকবে। এক সপ্তাহ পর থেকে অন্যান্য জেলার লবণযুক্ত চামড়া আসবে।

এদিকে ট্যানারিগুলোর এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় তারা আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে দাম পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দাবি করছেন ট্যানারিমালিকেরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিইটিপি বা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা না থাকায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়া যাচ্ছে না। সনদ না থাকায় আমাদের কাছ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ চামড়া নিচ্ছে না। যে দু-একটি দেশের ক্রেতা রয়েছে, তারাও আগামী দিনে চামড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র চীনের ক্রেতাদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’  

সাখাওয়াত উল্লাহ আরও বলেন, আগে ইউরোপের বাজারে প্রতি বর্গফুট চামড়া ১ থেকে ১ ডলার ৬০ সেন্টে বিক্রি করা যেত। চীনের ক্রেতাদের কাছে এখন ৪৫ থেকে ৮০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে।