চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত শীর্ষ ১০ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে ৭টি দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে অনেক দেশ বিপাকে পড়লেও ব্ল্যাক গোল্ড বা ‘কালো সোনা’খ্যাত জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তেমন কয়েকটি দেশে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রচলিত বাজার। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত শীর্ষ ১০ জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে সাতটি; অর্থাৎ সৌদি আরব, কানাডা, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, ইরাক ও কুয়েতে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। যদিও তেল উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে। যুদ্ধের কারণে রাশিয়ায় বাজার এক বছর ধরেই খারাপ। ইরানে বাংলাদেশ থেকে বলার মতো পোশাক রপ্তানি হয় না।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে যতটা সুযোগ আছে, ততটা কাজে লাগাতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণা পরিচালক, সিপিডি
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩ হাজার ১৩৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫৭৭ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে চলতি বছর এই বাজারে রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ১ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কানাডায় ৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চলতি অর্থবছর বেশ চমক দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবে ৪৭ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৮, কুয়েতে ৯০ ও ইরাকে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭১ শতাংশ। যদিও ইরাক ও কুয়েতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খুবই নগণ্য।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সৌদি আরবে ১৪ কোটি ৬০ লাখ বা ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৯ কোটি ৯২ লাখ ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে চলতি বছর দেশটিতে রপ্তানি বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস; অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ইরাকে ৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭১ শতাংশ বেশি। গত বছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক। এ ছাড়া কুয়েতে চলতি বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পোশাক। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ডলারের পোশাক।
এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ায় অনেক পশ্চিমা ব্র্যান্ড তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। অর্থনৈতিকভাবে দেশটি বেশ চাপে মধ্যে রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে সম্প্রতি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। সেখানে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানিও বাড়ছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে যতটা সুযোগ আছে, ততটা কাজে লাগাতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।’