জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’
জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’

ইউক্রেনে বিধ্বস্ত বাংলাদেশি সেই জাহাজটি পেল ২৩৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র জন্য ক্ষতিপূরণ মিলেছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বা বিএসসির মালিকানাধীন এ জাহাজটির ক্ষতিপূরণ বাবদ বিমা কোম্পানির কাছ থেকে ২ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১০৬ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৩৭ কোটি টাকা।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ওই বছরের ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রাশিয়ার মিসাইল হামলার শিকার হয় বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। এ হামলায় নিহত হন জাহাজটিতে দায়িত্বরত প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান। পরে জাহাজটিতে আটকে পড়া ২৮ নাগরিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই হামলার পর থেকে জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দরেই পড়েছিল।

হামলার পর জাহাজটির মালিক বিএসসি ক্ষতিপূরণ পেতে বিমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। ক্ষতিপূরণ বাবদ বিদেশি বিমা কোম্পানির কাছ থেকে বাংলার সমৃদ্ধির জন্য ২ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। ক্ষতিপূরণের সেই অর্থ সম্প্রতি হাতে পেয়েছে বিএসসি।

সংস্থাটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ দাবি করা হয়েছিল, তা–ই পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মো. জিয়াউল হক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির বিমাদাবির ২ কোটি ২৪ লাখ ডলার দেশে এসেছে। সরকারি বিমা কোম্পানি সাধারণ বীমা করপোরেশন হয়ে এ অর্থ বিএসসির হিসাবে জমা হচ্ছে।

বিএসসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে জাহাজটি ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলারে সংগ্রহ করেছিল সংস্থাটি। যুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এ জাহাজটি বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য আনা–নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। জাহাজটির ক্ষতিপূরণের বাইরে ওই জাহাজে থাকা নাবিকেরাও বিমা বাবদ প্রায় আট কোটি টাকার বেশি পেয়েছেন।

জানা যায়, যুদ্ধকালীন উচ্চ ঝুঁকি এড়াতে বিমা করা ছিল জাহাজটির। পরে যা লন্ডনের লয়েডের ব্রোকার টাইজারসের মাধ্যমে পুনর্বিমাও করা হয়েছিল। জাহাজটির বিমার যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে সাধারণ বিমার আওতায় ছিল ১০ শতাংশ এবং বাকি ৯০ শতাংশ ছিল টাইজারসের আওতায়। যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের সমুদ্রসীমায় পণ্যবাহী জাহাজের জন্য বিমার প্রিমিয়াম তাৎক্ষণিকভাবে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি সংস্থা। এই সংস্থার সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায় গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভোরেই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। হামলার সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলার ঘটনা ঘটে। তারপর বন্দরটির আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়তায় ৩ মার্চ জাহাজে থাকা ২৮ নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁদের ইউক্রেনের বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৯ মার্চ জাহাজটির নাবিক ও প্রকৌশলীরা দেশে ফেরেন।