আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হয়েছে
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হয়েছে

রিহ্যাবের আবাসন মেলায় ফ্ল্যাটের ছড়াছড়ি, তবে দাম আকাশছোঁয়া

পৌষের বিকেল। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নামবে। এমন সময় দ্বার উন্মোচিত হলো আবাসন মেলার। অতিথিদের সঙ্গে অল্পসংখ্যক দর্শনার্থী মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলেন। ততক্ষণে অধিকাংশ আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কেতাদুরস্ত হয়ে প্রস্তুত। কেউ কেউ অবশ্য তখনো গোছগাছে ব্যস্ত।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ও নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। এর মানে, আপনি চাইলে যেকোনো জায়গার ফ্ল্যাটই কিনতে পারবেন। সংখ্যাও একেবারে কম নয়। যদিও ভালো প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট কিনতে অবশ্যই মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প রয়েছে মধ্য বাড্ডায়। সেখানে ১ হাজার ৫৬৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট কিনতে লাগবে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আবার পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ওই কোম্পানিরই দেড় হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ সোমবার পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব আবাসন মেলা শুরু হয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত এই মেলায় ১৭০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে ১৫০টি আবাসন প্রতিষ্ঠান।

আজ বেলা তিনটায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্য, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) বিধিনিষেধ ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আবাসন খাতে সংকট চলছে। বিগত সরকার ২০২২ সালে আমাদের মতামত না নিয়েই ত্রুটিপূর্ণ ড্যাপ পাস করে। এরপরই আবাসন খাত স্থবির হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে আমরা নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার খসড়া সংশোধনে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি একটি কমিটি করেছে। ফলে নতুন বিধিমালা কবে চূড়ান্ত হবে, সেটি অনিশ্চিত।’ এমন পরিস্থিতিতে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় পর্যন্ত পুরোনো বিধিমালার আওতায় ভবনের নকশা অনুমোদনের দাবি জানান তিনি।

রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, রিহ্যাব যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পর্যালোচনা শেষ হবে। বর্তমানে ভবনের নকশা অনুমোদন ও নির্মাণকাজের জন্য আলাদা নকশা করা হয়। এতে বসবাসের সনদ পেতে সমস্যা হয়। এখন থেকে প্রতিটি পর্যায়েই রাজউকের কর্মকর্তারা যুক্ত থাকবেন।

ফ্ল্যাট হস্তান্তরে ক্রেতাদের হয়রানি না করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান রাজউক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় দুই কোটি মানুষের বাস। মানুষের তুলনায় জায়গা কম। আমাদের জলাধার ও কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। সে জন্য ঢাকায় আমরা সুউচ্চ ভবন দেখতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ঢাকার বাইরে সরকার স্যাটেলাইট শহর করতে চায়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. হাবিব উল্লাহ, রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সহসভাপতি মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস প্রমুখ।

ফ্ল্যাটের খোঁজখবর

র‌্যাংগস প্রোপার্টিজ ১৫টি আবাসন ও ১০টি বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে মেলায়। ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, বনানী, মিরপুর, উত্তরা ও লালমাটিয়ায় তাদের ১ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ১০ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও উত্তরায় তাদের প্রতি বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গার দাম ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় র‍্যাংগসের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে

র‌্যাংগস প্রোপার্টিজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কে এম স্বপ্নিক মাহমুদ বলেন, মেলায় বুকিং দিলে ক্রেতারা মূল্যছাড় পাবেন। অধিকাংশ ক্রেতা পরিস্থিতি বুঝতে চাইছেন। বর্তমানে কেবল নিজেদের বসবাসের জন্য কমবেশি এক কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটের চাহিদা আছে।

শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান শেলটেক মেলায় ৫০টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে। রাজধানীর জলসিঁড়ি আবাসন, উত্তরা, বনানী, বসুন্ধরা, আদাবর, মগবাজার, মালিবাগ, মধ্য বাড্ডা, কাঁঠালবাগান, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া ও ইস্কাটনে প্রকল্পগুলো গড়ে উঠছে। এসব প্রকল্পে ৯৭১ থেকে ২ হাজার ৮০১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতি বর্গফুটের দাম ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২৮ হাজার ৯০০ টাকা।

রিহ্যাবের আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় শেলটেকের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে

শেলটেকের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই বেচাবিক্রিতে স্থবিরতা চলছে। আশা করছি, রিহ্যাব মেলার মাধ্যমে ফ্ল্যাটের বেচাবিক্রি বাড়বে।’ তিনি জানান, মেলায় ফ্ল্যাটের বুকিং দিলে শেলটেক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড় দেবে১১০ উদীয়মান প্রতিষ্ঠান ক্রিডেন্স হাউজিং ৫৪টি আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, কলাবাগান, সিদ্ধেশ্বরী, উত্তরা, হুমায়ুন রোড, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা এসব প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে।

রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় ক্রিডেন্স হাউজিংয়ের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে

ক্রিডেন্সের চিফ ডিজাইন কো-অর্ডিনেটর মেহেদি হাসান বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা ও ঠিকাদাররা ফ্ল্যাট কিনছে না। তাঁরাই নতুন প্রকল্পে বেশি বিনিয়োগ করতেন। বর্তমানে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের মতো পেশাজীবীরা ফ্ল্যাট কিনছেন।

শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ট্রপিক্যাল হোমস ২৫টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে। তাদের আবাসিক প্রকল্পগুলোয় অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা ৫৪০। এর মধ্যে ২০০টি বিক্রয়যোগ্য। তবে প্রতিষ্ঠানটির স্টলে থাকা ৪৫ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নকশা সবার নজর কাড়ছে। মালিবাগে ৪৬ কাঠা জমির ওপর ভবনটি গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি।

রিহ্যাবের পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলায় ট্রপিক্যাল হোমসের স্টল। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে

ট্রপিক্যাল হোমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রবিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪৫ তলা ভবনটি দেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। এটি আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প।’ ট্রপিক্যাল হোমস ভবিষ্যতে ১০০ তলা ভবন করতে চায় বলেও জানান তিনি।