শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কষ্টে আছি। আজকে আমার কারখানায় যেতে ভয় লাগে। ভয় লাগে এই জন্য যে আমি কী নিজের জীবন নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব? এভাবে ব্যবসায়ীরা যদি নিজেদের কারখানায় যেতে শঙ্কিত হন, তাহলে তাঁরা আগামী দিনে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে যাঁরা শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ উসকে দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান আহসান খান চৌধুরী। বলেন, ‘বর্তমানে যাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতায় অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের দেশে কখনোই ‘‘দিতে হবে, দিতে হবে’’, ‘‘দাবি মানতে হবে’’—এমন সংস্কৃতি ছিল না। আমরা বিগত দিনে কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আমরা সেই সংস্কৃতি ফিরে পেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলার উন্নতি একটি মৌলিক বিষয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী দিনে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। এ সময় বক্তব্য দেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।
সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, বর্তমান সরকারকে ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বাড়াতে হবে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘ঠিক জায়গায় ঠিক লোক বসালে ভালো ফল দেয়। এই সরকারের আমলে সে প্রমাণ পাচ্ছি। ইতিমধ্যে ব্যাংকমাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। বিনিময় হার অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে। বর্তমান গভর্নরের ওপর ব্যবসায়ীদের আস্থা আছে। তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় আছে। গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষের নামে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে থাকলে নতুন কর্মসংস্থান কীভাবে হবে।’
ব্যাংক ঋণের সুদহার নিয়ে মেট্রো চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ১৪-১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা করে বিশ্বের কোনো দেশে মুনাফা করা যায় না। ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা ছোট বা বড় কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। অর্থায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। তিনি আরও বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বন্ধ। এফডিআই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ডলারের জন্য নয়, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হওয়া যায়। রপ্তানি পণ্যের বাড়তি দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করলেই বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলবে।
প্রশাসন পুরোপুরি কাজ করছে না, এমন দাবিও করেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন পুরোপুরি কাজ করছে না। চাকরি থাকবে কি থাকবে না, নতুন করে আবার কী বের হয়ে আসে—এমন সব কারণে কাজ করতে চাচ্ছেন না অনেকে। ফলে সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে কর্মকর্তাদের বার্তা দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু প্রবাসী আয় এবং দাতাদের ঋণ ও সহায়তায় দেশ চলবে না। ব্যবসায়ীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাঁদের (ব্যবসায়ীদের) কথা বলার একটা জায়গা লাগবে। সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার এখনো ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে হবে। তাঁদের অবদান স্বীকার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব অব্যবস্থাপনা ছিল, সেগুলো সংস্কার করতে হবে। তবে সেখানে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’