সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, রডের দাম গত এক বছরে ১২% কমেছে।
ব্যবসায়ীদের হিসাবে, এক বছরে সিমেন্টের চাহিদা ১৫% ও কাঁচামাল আমদানি
৯% কমেছে।
অবকাঠামো তথা নির্মাণ খাতের কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে রড–সিমেন্টসহ বিভিন্ন উপকরণের চাহিদা কমে গেছে। ফলে দেশের বাজারে এসব পণ্যের উৎপাদন ও দাম—দুটিই কমেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রডের দাম গত এক বছরে প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে।
ব্যবসায়ী ও উৎপাদকেরা বলছেন, নির্মাণ খাতের প্রধান উপকরণ রডের দাম গত বছর লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। এই বছরের আগস্টে সরকারের পটপরিবর্তনে পরপর অবকাঠামো খাতে ধীরগতি দেখা দেয়। তাতে কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বাধ্য হন উদ্যোক্তারা।
রডের মতো চাহিদা কমছে নির্মাণের আরেক বড় উপকরণ সিমেন্টের। তাতে অবশ্য সিমেন্টের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, রড ও সিমেন্ট এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে আর কমার সুযোগ নেই। কারণ, নতুন করে ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং বাড়তি সুদহারের কারণে উৎপাদন খরচ আরেক দফা বাড়বে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের নির্মাণ খাতে গত কয়েক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মূলত সরকারি প্রকল্পের ওপর ভর করে। নির্মাণসামগ্রীর মোট চাহিদার অন্তত ৬০ শতাংশ বিক্রি হতো সরকারি খাতে। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। চলমান প্রকল্পগুলোতে স্থবিরতা শুরু হয়। এটিই চাহিদা কমার সবচেয়ে বড় কারণ।
ইস্পাত খাতের শীর্ষ উদ্যোক্তারা অবশ্য বলছেন, মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে এখন চাহিদা সামান্য বেড়েছে। মূলত ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর ভর করে এই চাহিদা বেড়েছে। তবে সব মিলিয়ে নির্মাণ খাতের জন্য এই মৌসুম ভালো যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সভাপতি ও জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্মাণ উপকরণের চাহিদা সবচেয়ে বেশি কমেছে সরকারি ও আবাসন কোম্পানিগুলোর প্রকল্পে। ব্যক্তি খাতে চাহিদা সেভাবে প্রভাব পড়েনি। তবে বছরের শেষ দিকে এখন চাহিদা সামান্য বাড়লেও তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।
রডের বাজারে বিএসআরএম, আবুল খায়ের, জিপিএইচ ও কেএসআরএম—এই চার কোম্পানির অংশীদারি সবচেয়ে বেশি। দেশের বাজারে চারটি কোম্পানির প্রতি টন রড বিক্রি হয় প্রায় ৮০ হাজার ৫০০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায়। এক সপ্তাহে টনপ্রতি এক হাজার টাকা বেড়ে এই দরে উন্নীত হয়েছে। এটি অবশ্য গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর বাইরে ঢাকার আনোয়ার ইস্পাত, চট্টগ্রামের মোস্তফা হাকিম গ্রুপের এইচঅ্যান্ডএম স্টিল, গোল্ডেন ইস্পাতসহ বিভিন্ন কোম্পানির রডের দামও গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদনকারী কোম্পানি বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে রড বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়ে চলেছে। যেমন ডলারের দর ১২২ টাকা থেকে বেড়ে ১২৬–১২৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আবার সুদের হারও বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রডের দাম আর কমার সুযোগ নেই।
চাহিদা কমায় রডের কাঁচামালের আমদানিতে প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে নির্মাণ মৌসুম শুরু হয়, যা চলে মার্চ–এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময়কে বিবেচনায় রেখেই সাধারণত উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানি বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এবার নির্মাণ মৌসুম শুরু হওয়ার পর চাহিদা পতনের কারণে এখন আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) রডের কাঁচামাল আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশ। এরপর প্রবৃদ্ধি কমে যায়।
রডের মতো সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। গত অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি হয় প্রায় ৮১ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছে প্রায় ৭৪ লাখ টন। সে হিসাবে এক বছরে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ৯ শতাংশ।
জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিরুল হক বলেন, ‘চাহিদা কমায় সিমেন্টের কাঁচামালের আমদানি কমছে। আমাদের ধারণা, সিমেন্টের চাহিদা কমার এই হার ১৫ শতাংশ হবে।’