অনেক বছর ধরে বগুড়া থেকে ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি হলেও এখন হয় শুধু ভারতে।
বগুড়া থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানি ৪০ শতাংশ কমেছে। ২০২৩ সালে রপ্তানি গন্তব্য কমে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে আয় কমেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ী নেতা ও বিশ্লেষকেরা পণ্যের গুণগত মান ও বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে এই জেলা থেকে ভারতে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এর আগে ২০২২ সালে বগুড়া থেকে ৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ৬২৯ কোটি ২০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সেই হিসাবে বগুড়া থেকে পণ্য রপ্তানি আয় ১ বছরে ২৫৫ কোটি টাকা ৪২ লাখ টাকা কমেছে। এর আগে ২০২১ সালে বগুড়া থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন ডলারের সংকটে রপ্তানি কমেছে।মাফুজুল ইসলাম রাজ, সহসভাপতি, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
অন্য বছরগুলোর মধ্যে ২০২০ সালে বগুড়া থেকে ৫ কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ডলার, ২০১৯ সালে ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ২০১৮ সালে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৪ হাজার ডলার এবং ২০১৭ সালে ১ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি মাফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে মার্কিন ডলারের সংকটে রপ্তানি কমেছে। তিনি আরও বলেন, বগুড়ায় বিমানবন্দর চালু হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। এর ফলে রপ্তানি আয় বাড়বে। তাতে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে।
■ ২০২৩ সালে ভারতে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
■ ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশে ২০২১ সালে ১৬ ধরনের ও ২০২২ সালে ১২ রকমের পণ্য রপ্তানি হলেও ২০২৩ সালে একদম হয়ইনি।
এখানে বর্তমানে পাটজাত, ফাউন্ড্রি, ভোগ্যপণ্য, কুঁড়ার তেল (রাইস ব্র্যান অয়েল), হস্তশিল্প, কারুপণ্য, টুপি, পাটজাত দ্রব্য, সেচপাম্প, মোটর পার্টস বা গাড়ির যন্ত্রাংশ, অয়েল ফিল্টার বা এয়ার ফিল্টার, সয়াবিনজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, সৌদি রাজকীয় পোশাক, টিউবওয়েল বা নলকূপসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের রপ্তানিমুখী অনেক কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া থেকে নকশিকাঁথা, পাবদা, শিং মাছসহ হরেক রকম পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।
বগুড়ার উল্লেখযোগ্য রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিং মিলস, তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মজুমদার প্রোডাক্টস, বগুড়া মাল্টি অয়েল মিলস, ওয়েস্টার্ন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস, বিকে ট্রেডার্স, আরোতি ইমপ্রেক্স, মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, রণি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, আলাল অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি।
স্থানীয় চেম্বার সূত্রে জানা যায়, বগুড়া থেকে ২০২৩ সালে শুধু ভারতে সাত ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ রকমের ও ২০২১ সালে ১৬ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
অনেক বছর ধরে বগুড়া থেকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা, জার্মানি, চীন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি হলেও গত বছর শুধু ভারতেই রপ্তানি হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ভারতে ২১ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৭ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
বগুড়া মোটরসের পরিচালক তাহমিদুল ইসলাম বলেন, এয়ার ও অয়েল ফিল্টার বিদেশে রপ্তানিতে নানা অসুবিধা আছে। এ কারণে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশীয় বাজারে এয়ার ও অয়েল ফিল্টারের চাহিদা বেড়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২২ সালে বগুড়া থেকে ভারতে ৩০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের রাইস ব্র্যান অয়েল বা কুঁড়ার তেল রপ্তানি হয়েছিল। এখন এটির রপ্তানি কমছে। ওয়েস্টার্ন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আজিজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে রাইস ব্র্যান অয়েলের রপ্তানি কমছে। এই পণ্যের বড় বাজার ভারত। কিন্তু সেই বাজারে পণ্যটির দাম কমে গেছে।
একসময় বগুড়ার রপ্তানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় পণ্য ছিল সেচপাম্প। ২০০০ সালের দিকে এটির রপ্তানি শুরু হয়। তবে বিদেশে এখন পণ্যটির চাহিদা কমে আসছে।