নতুন করে আরও ১৮ কোটি ৮০ লাখ পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মোট ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ডিম আমদানির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ অনুমতি কার্যকর থাকবে। এ দফায় অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল ও প্রাণ ডেইরির মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুমোদন পাওয়াদের মধ্যে ৩৪টি প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ পিস করে ও ২টি প্রতিষ্ঠান ২৫ লাখ পিস করে ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে। বাকি ৬টি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ৪০ লাখ, ৩০ লাখ, ২০ লাখ, ১৬ লাখ, ১৫ লাখ ও ৯ লাখ পিস করে ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে।
অবশ্য এর আগেও গত দেড় মাসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ১০ লাখের মতো মুরগির ডিম আমদানি করেছে। অথচ এ সময়ে প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৩৩ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরবরাহ–সংকটের মধ্যে ডিমের বাজার চড়া হওয়ার পর কয়েক দফায় ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা এখন আর এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ডিম আমদানিতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা মানতে তাঁরা বিপত্তিতে পড়ছেন বলে তাঁদের অভিযোগ।
এদিকে সরকার ডিম আমদানির অনুমতির ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এ দফায়ও কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। শর্তগুলো হলো এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু–মুক্ত দেশগুলো থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত থাকার সনদ দাখিল করতে হবে। প্রতিটি চালানের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে সংশ্লিষ্ট সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। অনুমতি পেলে সাত দিন পরপর এ–সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৪৮–৫০ টাকায়। সে হিসাবে খুচরা বাজারে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪৪ থেকে ১৫০ টাকা।
গত অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে বাজারে ডিমের দাম বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময় খুচরা বাজারে এক ডজন ডিমের দাম ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর সরকার ডিমের সরবরাহ ঠিক করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়। তাতে বাজারে ডিমের দাম ১৫০ টাকার নিচে নেমে আসে।
পাশাপাশি ডিমের আমদানি শুল্ক কমানো ও কয়েক ধাপে বেশ কিছু কোম্পানিকে ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়। গত অক্টোবর মাসে ডিম আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। সে সময় আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শুল্ক ছাড়ের সুবিধা থাকার কথা জানানো হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর চলতি বছরের জন্য ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, প্রতিটি ডিমের দাম হবে উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। আর ডিমের ডজন হওয়ার কথা ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।