পছন্দের ফ্ল্যাট কিংবা প্লট খুঁজতে ক্রেতা–দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে রিহ্যাবের আবাসন মেলায়। আজ বুধবার ছিল বড়দিনের ছুটি। ফলে ক্রেতা–দর্শনার্থীর সমাগম আগের দুই দিনের চেয়ে বেশি ছিল। তাঁরা এক থেকে দুই কোটি টাকা দামের মাঝারি মানের ফ্ল্যাট কেনায় বেশি আগ্রহ দেখান বলে জানান বিক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলায় আগত ক্রেতা–দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের ফ্ল্যাট-প্লটের খোঁজ নিচ্ছেন। ফ্ল্যাট বা প্লট পছন্দ হলে কেউ কেউ তাৎক্ষণিকভাবে বুকিং দিচ্ছেন। যদিও বেশির ভাগ লোক খোঁজখবর নিয়ে রাখছেন ভবিষ্যতে কেনার আশায়। অন্যদিকে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও প্লট-ফ্ল্যাট বুকিংয়ের বিপরীতে বিভিন্ন অফার শুনিয়ে ক্রেতা টানার চেষ্টা করছে।
বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের স্টলগুলোয় আগত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসক, ব্যাংক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই আবাসন প্রকল্পের খোঁজ নিতে মেলায় আসেন।
এবারের আবাসন মেলায় অ্যাশিউর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাশিউর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন প্রায় ৮৫০টি অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে ১১টি বাণিজ্যিক অ্যাপার্টমেন্ট, বাকিগুলো আবাসিক। আবাসন প্রকল্পগুলো রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, বসুন্ধরা, উত্তরা, ইন্দিরা রোড, মোহাম্মদপুর, পশ্চিম ধানমন্ডি, মিরপুর ও আফতাবনগরে অবস্থিত। এসব প্রকল্পে ১ হাজার ৬৫ থেকে ৪ হাজার ৪৪৪ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ১১ হাজার ৫০০ থেকে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
অ্যাশিউর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইনের বিক্রয় ও বিপণন ব্যবস্থাপক কার্তিক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকেরা আমাদের কাছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার বর্গফুট আকারের ফ্ল্যাট বেশি খুঁজছেন। বিশেষ করে অনেকে রেডি ফ্ল্যাট কিনতে চান।’ মেলায় ইতিমধ্যে অ্যাশিউর গ্রুপের পাঁচটি আবাসিক ও দুটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিন দশকের পুরোনো প্রতিষ্ঠান আরবান ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এবারের মেলায় ২৪টি প্রকল্পের মোট ১৬৪টি ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। প্রকল্পগুলো রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, উত্তরা, ইন্দিরা রোড ও মোহাম্মদপুরে অবস্থিত। তাদের ফ্ল্যাটগুলো ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের। এসব ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আরবান প্রপার্টি অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে বেশ কিছু ব্যবহৃত ফ্ল্যাটও বিক্রি হচ্ছে মেলায়।
আরবান ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. সাব্বির আমিন বলেন, ‘শুরুর দিক থেকে আমাদের অধিকাংশ আবাসন প্রকল্প করা হয়েছে ধানমন্ডিতে। তবে বর্তমানে রাজধানীর বসুন্ধরা, মোহাম্মদপুর, উত্তরাসহ আরও কিছু স্থানে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মেলার মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলোর তথ্য গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।
একটি অভিজাত কনডোমিনিয়াম ও ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প নিয়ে এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে এবিসি রিয়েল এস্টেট। এসব প্রকল্পে ২৮১টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে ১৪৭টি বিক্রয়যোগ্য। সাধারণ অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পগুলো রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ডিওএইচএস, শ্যামলী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে অবস্থিত। অন্যদিকে ঢাকার মগবাজারে নির্মিত হচ্ছে এবিসির দ্বিতীয় কনডোমিনিয়াম প্রকল্প ‘দ্য অর্চার্ড অ্যাট ইস্পাহানি কলোনি’। এই প্রকল্পের অধীন ১৪ তলার পাঁচটি টাওয়ারে ১৪৩টি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে।
এবিসি রিয়েল এস্টেটের বিক্রয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আক্কাস আলী বলেন, ‘আমাদের আবাসন প্রকল্পের জন্য উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আবাসিক প্রকল্পের বাইরে শ্যামলী ও বনানীতে আকর্ষণীয় জায়গায় আমাদের দুটি বাণিজ্যিক প্রকল্প রয়েছে।’
আরেক আবাসন কোম্পানি বিল্ডিং ফর ফিউচার এবারের মেলায় ১৫টি প্রকল্পে মোট ১২০টি অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক স্পেস নিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্পগুলো প্রধানত উত্তরার ৩, ৪, ৬, ১০, ১৩ ও ১৬ নম্বর সেক্টরে। পাশাপাশি মিরপুর ১, আফতাবনগর, লক্ষ্মীবাজার, মাদানী অ্যাভিনিউ, মতিঝিল, কাঁঠালবাগানে তাদের নির্মাণাধীন প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে যশোরে একটি প্রকল্প আছে। অ্যাপার্টমেন্টগুলোর আকার ৯৬৫ থেকে ২ হাজার ২৬৫ বর্গফুটের মধ্যে, যার দাম বর্গফুটপ্রতি ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
বিল্ডিং ফর ফিউচারের বিক্রয় বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পে ভবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রকল্পগুলোয় ৩৫–৪০ শতাংশ পর্যন্ত জায়গা খালি রাখা হয়। মেলায় কেউ অ্যাপার্টমেন্ট কিনলে আমরা ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিই।’