কোনো কোনো সংগঠন অবশ্য নিম্নতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করেছে।
শ্রমিকনেতারা বলেন, জাতীয় রাজনীতির জটিল পরিবেশে ইচ্ছেমতো লামসাম মজুরি ঘোষণা করলে মানা হবে না।
শ্রমিকের মজুরি ইস্যুতে পোশাক খাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)। তারা পোশাকশ্রমিকের জন্য নিম্নতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনটি বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে কারখানার উৎপাদনপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানায়।
রাজধানীর তোপখানায় জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে আইবিসির জরুরি সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। আইবিসির সভাপতি আমিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে আইবিসির অধীনে ১৮টি রেজিস্টার্ড ফেডারেশন রয়েছে।
মালিকপক্ষের ১০,৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান শ্রমিকনেতারা।
তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ২৩ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি, ৬৫ শতাংশ মূল মজুরি, বছরে ১০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এবং সাতটির পরিবর্তে পাঁচটি গ্রেড দাবি করেছে আইবিসি। একই সঙ্গে সংগঠনটি বলেছে, তারা কোনোভাবেই আইবিসি কারখানা ভাঙচুর, ইচ্ছামাফিক কাজ বন্ধ, যখন-তখন রাস্তা অবরোধ সমর্থন করে না।
আইবিসি বলেছে, অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে সহায়তা করবে না; বরং ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় মালিকেরা তাদের ভাড়াটে মাস্তানবাহিনী দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালানোরও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইবিসি।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের গত রোববারের সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি নিম্নতম মজুরি প্রস্তাব করেন ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে নিম্নতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন।
প্রত্যাশার চেয়ে মালিকপক্ষ অনেক কম মজুরি প্রস্তাব করায় সোমবার থেকে তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা চার দিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন। আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। ভাঙচুর করেছেন অর্ধশত গাড়ি। পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি গতকাল শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে মালিকপক্ষের দেওয়া ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকনেতারা। তাঁরা বলেছেন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (বৃদ্ধি) ও মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করলে বর্তমানে একজন শ্রমিকের মজুরি এমনিতেই ১১ হাজার টাকা হওয়ার কথা।
সমাবেশে শ্রমিকনেতারা বলেন, ২৫ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব বিবেচনায় এনে অতি দ্রুত নতুন মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করতে হবে। তা না হলে শুধু গাজীপুর না অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিকেরাও বিক্ষুব্ধ হবেন।
সংগঠনটির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন এর সহসভাপ্রধান অঞ্জন রায়, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গার্মেন্ট টিইউসির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে শ্রমিকনেতারা বলেন, বর্তমান বাজার বিবেচনায় শ্রমিকেরা চলার মতো অবস্থায় নেই। পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার ওপরে, আলু ৭০ টাকা। এভাবে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শ্রমিকের নাগালের বাইরে। এ সময়ে মালিকের সুবিধামতো মজুরি প্রস্তাব এবং নতুন মজুরি ঘোষণায় বিলম্ব শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্বহীনতারই পরিচয়। তাঁরা বলেন, জাতীয় রাজনীতির জটিল পরিবেশে ইচ্ছেমতো লামসাম মজুরি ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা তা গ্রহণ করবেন না।