ফোরম আয়োজিত মতবিনিময় সভা। গতকাল রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে।
ফোরম আয়োজিত মতবিনিময় সভা। গতকাল রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে।

শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলায় বিজিএমইএর পর্ষদ ব্যর্থ, দাবি ফোরাম নেতাদের

তৈরি পোশাকশিল্পে চলমান শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলায় বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফোরাম নেতারা। তাঁদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারকে পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বোঝাতেও ব্যর্থ হয়েছে বিজিএমইএর পর্ষদ। একটি গোষ্ঠী পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করার কলকাঠি নাড়ছে। অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ কমাচ্ছে।

পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনী জোট ফোরামের মতবিনিময় সভায় নেতারা এসব দাবি করেন। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সভায় ফোরামের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা অংশ নেন। ফোরামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুর রশিদ হোসাইনী বলেন, পোশাকশিল্পে অস্থিরতা আগেও হয়েছে। তবে অতীতের অস্থিরতা এত দীর্ঘায়িত হয়নি। এই অস্থিরতার পেছনে কারও ইন্ধন থাকতে পারে। তারা শ্রমিক অসন্তোষের নামে দেশের অর্থনীতিকে ধূলিসাৎ করতে চায়।

আব্দুর রশিদ হোসাইনী আরও বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা করে অনেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অনেকে আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি; বিদেশেও টাকা পাচার করেছেন। তাঁদের কারণে বেকায়দায় থাকেন সত্যিকারের মালিকেরা।  

চলমান সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএর পর্ষদকে চারটি পরামর্শ দেন সাবেক সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ। প্রথমত, আশুলিয়া এলাকায় ২৫-৩০টি কারখানা এখনো বন্ধ আছে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এই কারখানাগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আশুলিয়ার কারখানাগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রেসকিউ প্যাকেজ বা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি ঘোষণা করা দরকার। তৃতীয়ত, তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। চতুর্থত, বিজিএমইএ সদস্যদের কারখানার সক্ষমতার ভিত্তিতে পৃথক নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
ফয়সাল সামাদ আরও বলেন, এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে যেভাবে তৈরি পোশাকের ব্যবসা বাংলাদেশে এসেছিল, সেভাবেই অন্য দেশে চলে যেতে পারে।

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, বর্তমানে আশুলিয়ায় যা হচ্ছে, তা শ্রম আইনবিষয়ক সমস্যা নয়। আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত সমস্যা। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হলেও তার ব্যবহার হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। আইনভঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা গেলে এত দিনে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু তৈরি পোশাকই একমাত্র খাত, যেখানে অদক্ষ শ্রমিকেরা মাসে বেতন, ওভারটাইমসহ ১৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। দেশে কি আর কোনো খাত আছে, যেখানে অদক্ষ শ্রমিকেরা ১৫ হাজার টাকা বেতন পান?

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থায় আনা ভীষণ জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা ক্রেতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। ওনার মতো বিশ্ববরেণ্য মানুষকে ব্যবহার করতে না পারলে সেটা হবে আমাদের (বিজিএমইএ) ব্যর্থতা।’