পণ্য রপ্তানির অর্থ আসা কমেছে

মার্কিন ডলার
রয়টার্স ফাইল ছবি

পণ্য রপ্তানি বাড়লেও দেশে রপ্তানির অর্থ আসা বাড়ছে না। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৯৯০ কোটি ডলারের রপ্তানির অর্থ দেশে এলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এসেছে ৯০৭ কোটি ডলার। যদিও প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে রপ্তানি বেশি হয়েছে ১৮ কোটি ডলারের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে পণ্য রপ্তানির অর্থ বাবদ দেশে এসেছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের পণ্য।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে একপর্যায়ে দেশে ডলার–সংকট শুরু হয়। অর্থনীতিও চাপে পড়ে যায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও সতর্ক অবস্থানে থাকায় দেশে ডলার–সংকট কিছুটা কমলেও পুরোপুরি সংকট কাটেনি। ফলে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামেই ডলার কিনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি। অথচ প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার একটি অংশ দেশে সময়মতো আসছে না। তিন অর্থবছর ধরে দেশে না আসা রপ্তানি আয়ের পরিমাণটি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে দেশে আসে ৩ হাজার ৩৯৭ কোটি ডলার। পরের অর্থবছর রপ্তানি বেড়ে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ওই অর্থবছর রপ্তানির অর্থ দেশে আসে ৪ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। আর বিদায়ী অর্থবছর ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়। তার বিপরীতে রপ্তানি আয় দেশে আসে ৪ হাজার ৩৮৭ কোটি ডলার। তার মানে গত অর্থবছর ১ হাজার ১৯৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই সিংগভাগ পণ্য রপ্তানি হয়।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তার বিপরীতে দেশে আসে ৯৯০ কোটি ডলার। পরের তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি হয় ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ডলার। এই সময়ে দেশে আসে ৯০৭ কোটি ডলার। রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনের এই হার গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরের চেয়েও কম। ওই সময়ে দেশে ১ হাজার ১৪৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। যদিও তখন রপ্তানি বেশি ছিল ১ হাজার ৪৮১ কোটি ডলার।

অস্বাভাবিক কোনো কিছু ঘটে থাকলে সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
ফজলে শামীম এহসান, সহসভাপতি, বিকেএমইএ

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। রপ্তানির অর্থ সময়মতো না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সময় বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাকের দাম পরিশোধে ছয় মাস পর্যন্ত সময় নিত। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি না থাকলেও অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান দু-তিন মাস পর অর্থ দিচ্ছে। সে কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানির একটা অংশ আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে অস্বাভাবিক কোনো কিছু ঘটে থাকলে সে বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।