গ্যাসের অভাবে টানা কয়েক মাস ধরে দেশের তিনটি ইউরিয়া সার কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কারখানায় গত জানুয়ারি থেকে ও বাকি দুটিতে মার্চ থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সার উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষিকাজে চাহিদা অনুসারে ইউরিয়া সার সরবরাহ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংস্থাটি বন্ধ থাকা সার কারখানায় দ্রুততম সময়ে গ্যাস পৌঁছানোর জন্য কাজ করছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীন বর্তমানে পাঁচটি ইউরিয়া সার কারখানা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা, সিলেটের শাহজালাল সার কারখানা, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল), জামালপুরের যমুনা সার কারখানা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা।
এসব কারখানার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জামালপুরের যমুনা এবং মার্চ থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যে দুটি সার কারখানা চালু রয়েছে, এর মধ্যে ঘোড়াশালে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন ও সিলেটের শাহজালালে দৈনিক ১ হাজার ৩০০ টন ইউরিয়া উৎপাদিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘ইউরিয়া উৎপাদনের জন্য আমাদের সব কটি কারখানাই প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু বন্ধ তিনটি কারখানায় সার উৎপাদন শুরু করতে পারলে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মজুত সম্ভব হবে।’
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গত শনিবার প্রথম অফিস করেন। ওই দিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে একটি হলো বন্ধ সার কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা। তবে কত সময়ের মধ্যে সেটি সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত করে জানাননি।
বন্ধ থাকা কারখানাগুলোতে যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যে রেশনিংয়ের মাধ্যমে এসব কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবেজাকিয়া সুলতানা, শিল্পসচিব
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা সব মিলিয়ে ৩২ লাখ টন, যার পুরোটাই বিসিআইসি সরবরাহ করে। এর মধ্যে বিসিআইসির কাছে এখন মজুত রয়েছে প্রায় ছয় লাখ টন সার। কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) থেকে কেনা হবে ৬ লাখ টন এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে ১০ লাখ টন। এর বাইরে বিসিআইসি নিজেরা উৎপাদন করবে অন্তত ১০ লাখ টন সার।
বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ টন ইউরিয়া সার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব সার আসে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিসিআইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদেশ থেকে এক টন ইউরিয়া সার আমদানি করতে এখন ৫০-৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়; সেখানে নিজেরা উৎপাদন করলে লাগে ৩২-৩৩ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেলে তাদের ৫ কারখানায় অন্তত ২০ লাখ টন সার উৎপাদন করা সম্ভব। তাহলে বিদেশ থেকে সেভাবে আর ইউরিয়া আমদানির প্রয়োজন হবে না। কিন্তু গ্যাস না থাকায় এখন নিজেদের পরিকল্পনায় থাকা ১০ লাখ টন সার উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে ২০২২ সালের জুনে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়। তবে দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও বাড়তি দাম দিচ্ছে না সরকারি সার কারখানাগুলো। বিসিআইসি কর্মকর্তারা জানান, এত টাকা দেওয়ার সক্ষমতা তাদের নেই। এ জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা সদ্য বিদায়ী সরকারের কাছে ভর্তুকি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিসিআইসিও গ্যাসের বাড়তি দাম পরিশোধ করেনি।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘বন্ধ থাকা কারখানাগুলোতে যত দ্রুত সম্ভব গ্যাস পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যে রেশনিংয়ের মাধ্যমে এসব কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’ গ্যাসের ভর্তুকি দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগের সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সভায় আলোচনা হয়েছিল। তবে তখন কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এখন বিষয়টি পুনরায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে।