চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনী এলাকায় গতকাল সোমবার বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে বড় আকারের ৩৮টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহবুবুর আলম। প্রতিটি চামড়া গড়ে ৪৮০ টাকায় কেনেন তিনি। এরপর গতকাল রাতে আড়তদারেরা এসে সেই চামড়ার দাম দিতে চান ৩৮০ টাকা করে। অর্থাৎ কেনা দরের চেয়েও ১০০ টাকা কমে। তবে লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করতে রাজি হননি মাহবুবুর।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মাহবুবুর আলমের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নগরের চৌমুহনী এলাকায় ফুটপাতের ওপর চামড়াগুলো রেখে এক পাশে বসে ছিলেন তিনি। মাহবুবুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছি। লাভ করতে না পারলেও লোকসান হয়নি কখনো। এবার বিক্রিই হচ্ছে না। ফলে শপথ নিয়েছি, আর কখনো এ ব্যবসায় নামব না।’
মাহবুবুর ভেবেছিলেন এবার চামড়া বিক্রি করে অন্তত খরচটা উঠে আসবে। সেটি হয়নি। কোনো আড়তদার ৪৮০ টাকা দরেও না কেনায় এ বিক্রেতা এখন অপেক্ষা করছেন সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির জন্য। মাহবুবুর বলেন, ‘সকালে এক আড়তদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ১০০ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। পরে আবার মত পাল্টে ফেলেন। এখন অপেক্ষা করছি, বর্জ্যের গাড়ি আসলে সব চামড়া ফেলে দেব।’
চৌমুহনী সড়কেরই আরেক পাশে শ খানেক চামড়ার বড় স্তূপ দেখা গেল। কাছে গিয়ে কথা হয় চামড়া বিক্রেতা আবদুল হামিদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর কাছে বিভিন্ন আকারের ২৫০টি চামড়া রয়েছে। তাঁর কেনা পড়েছে ৪২০ টাকা। গতকাল রাতে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। কিন্তু বিক্রি করেননি।
আবদুল হামিদ মনে করছেন, গতকাল রাতে বিক্রি না করে তিনি ভুল করেছেন। আজ সকালে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন এক আড়তদার। বিক্রি করবেন কি না, এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আবদুল হামিদ ও মাহবুবুর উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় চামড়া বিক্রি করেননি। চামড়া বেচাকেনা নিয়ে নগরীর অনেক বিক্রেতাই হতাশার কথা জানিয়েছেন। আবার লোকসান দিয়ে বিক্রির ঘটনাও আছে। যেমন এবার প্রায় ৩০০ পিস কাঁচা চামড়া বিক্রি করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রুবেল। প্রতিটি চামড়া গড়ে ৫৭০ টাকা দরে কেনেন তিনি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় কথা হয় রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত গড়ে ২৫০ টাকা দরে চামড়াগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। এতে সব মিলিয়ে আমার লাখখানেক টাকা লোকসান হয়েছে। উচিত শিক্ষা হয়েছে।’
বৃহত্তর চট্টগ্রামে এ বছর প্রায় চার লাখ গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ৫০ হাজারের বেশি ছাগল কোরবানি হয়। এর মধ্যে কিছু চামড়া উপজেলাপর্যায়ে লবণ দিয়ে রাখা হয়। যদিও বেশির ভাগ চামড়া চলে আসে নগরের আতুরার ডিপোর আড়তে। এ ছাড়া গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশও কিছু চামড়া সংগ্রহ করে। সেই চামড়াগুলোও আড়তদারদের আড়তে চলে যায়। এ বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আড়তদারেরা। চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ সংগ্রহের পাশাপাশি শ্রমিকও নিয়োগ করেন তাঁরা।
মৌসুমি বিক্রেতারা বলছেন, ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। নির্ধারিত দামের আশপাশেও চামড়া বিক্রি হয়নি। যেমন ৫০০ টাকা গড় দামে ১ হাজার ২০০ পিস চামড়া কেনেন দীর্ঘদিনের চামড়া ব্যবসায়ী সাইফুল আলম। তিনি বলেন, ‘এবার দাম পাইনি। গড়ে ২৫০ টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছি।’
অবশ্য চামড়ার দাম কম পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতে চাইলেন না বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন। তাঁর দাবি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পেয়েছেন। তাঁরা ৭০০ টাকা পর্যন্ত দরে বড় চামড়া কিনে নিয়েছেন। কিছু ব্যবসায়ী এমনিতেই দাম না পাওয়ার কথা বলেছেন।