সিমেন্টশিল্পের মালিকেরা বলছেন, কাঁচামালের শুল্কায়নের ক্ষেত্রে আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য ধরা হচ্ছে।
সিমেন্ট উৎপাদনের মূল কাঁচামাল ক্লিংকার প্রতি টন ৪৬ থেকে ৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এ ক্লিংকারের আমদানি মূল্য ৬০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করছেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। এতে কাঁচামাল আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষার নামে সিমেন্ট তৈরির আরেক কাঁচামাল লাইমস্টোন আমদানির শুল্কায়নে সাত-আট দিন সময় নেওয়া হচ্ছে। এতে বন্দরে জাহাজ অলস পড়ে থাকছে। অতিরিক্ত খরচ গুনছেন ব্যবসায়ীরা।
শুল্কায়নে এ দুই সমস্যার সমাধান চেয়ে গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি মো. আলমগীর কবির। চিঠিতে বলা হয়েছে, সিমেন্টশিল্পে বর্তমানে চরম সংকট চলছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট; আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে জটিলতা; জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যয় বৃদ্ধি এবং চাহিদার ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি এ সংকটের উল্লেখযোগ্য কারণ। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচামালের আমদানির মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি লাইমস্টোনের শুল্কায়ন সহজীকরণ করার অনুরোধ জানান বিসিএমএ সভাপতি।
বিসিএমএ দাবি করেছে, সিমেন্ট তৈরির মূল কাঁচামাল ক্লিংকার, স্ল্যাগ ও জিপসাম প্রায় শতভাগ আমদানি করতে হয়। তবে অনেক দিন ধরেই এসব কাঁচামালের প্রকৃত আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে শুল্কায়ন করা হচ্ছে।
■ প্রতি টন ক্লিংকার ৪৬-৫০ ডলারে আমদানি হলেও শুল্কায়ন করা হচ্ছে ৬০ ডলারে।
■ জিপসাম প্রতি টন ২৭-২৮ ডলারে আমদানি হলেও শুল্কায়ন হচ্ছে ৩৫ ডলারে।
প্রতি টন ক্লিংকার ৪৬-৫০ ডলারে আমদানি হলেও শুল্কায়নের সময় মূল্য ধরা হচ্ছে ৬০ ডলার। স্ল্যাগ প্রতি টন সাড়ে ২৪ থেকে ২৬ ডলারে আমদানি করা হচ্ছে কিন্তু শুল্কায়নের সময় মূল্য ধরা হচ্ছে ৩০ ডলার। অন্যদিকে জিপসাম প্রতি টন ২৭-২৮ ডলারে আমদানি হলেও শুল্কায়নের ক্ষেত্রে ৩৫ ডলার মূল্য হিসাব করা হচ্ছে। সংগঠনটি প্রতি টন ক্লিংকারের শুল্কায়নে ৫০ ডলার, স্ল্যাগে ২৬ ও জিপসামে ৩০ ডলার নির্ধারণের দাবি করেছে।
বিসিএমএ আরও বলছে, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আরেকটি কাঁচামাল লাইমস্টোনের অধিকাংশই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে শুল্কায়নের মাধ্যমে খালাস হয়। তবে কয়েক মাস ধরে এ শুল্কায়নপ্রক্রিয়ায় অনেক বিলম্ব হচ্ছে। এ বিলম্বের অন্যতম কারণ, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রথমে জাহাজ থেকে লাইমস্টোনের নমুনা সংগ্রহ করে। তারপর আমদানি করা লাইমস্টোন সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রযোজ্য কি না, তা জানতে পরীক্ষা করা হয়। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে সাত-আট দিন সময় লাগে। অতিরিক্ত সময় বন্দরে অবস্থানের জন্য সিমেন্ট কোম্পানিগুলোকে এ জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
লাইমস্টোনের শুল্কায়নপ্রক্রিয়া সহজ করতে সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রতিনিধির কাছ থেকে একটি অঙ্গীকারনামা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএমএ। তারা বলেছে, সেই অঙ্গীকারনামায় বলা থাকবে, পরীক্ষার পর যদি প্রমাণিত হয় আমদানি করা লাইমস্টোন সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রযোজ্য নয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট সিমেন্ট উৎপাদনকারী সে জন্য দায়ী থাকবে।
বিসিএমএ বলছে, দেশের আমদানি পণ্যের তালিকায় মূল্য ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণের দিক থেকে বিবেচনা করলে সিমেন্ট খাতের ক্লিংকার শীর্ষ তালিকায় থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে কাস্টম হাউস প্রতি তিন মাস অন্তর সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার উদ্যোগ নিতে পারে।