গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন বা পায়খানা নির্মাণ ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাত ধোয়া স্টেশন নির্মাণকাজের পরামর্শকের পেছনেই শুধু খরচ হবে ৫৬ কোটি টাকা। একই প্রকল্পে তিন লাখ গরিব মানুষ বাছাই এবং করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষের আচরণ পরিবর্তনের কাজে ব্যয় হবে আরও ৪০ কোটি টাকা।
‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ নামের এই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হচ্ছে।
দেশের ৩০ জেলার ৯৮টি উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনের জন্য প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে ঋণ নিয়ে এই প্রকল্পের পরামর্শকের টাকা খরচ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক এবং এআইআইবি যৌথভাবে ঋণ দেবে ১ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। বাকি ৫২ কোটি টাকা আসবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে খরচের বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা বলেছে, এর আগে এসব খাতে খরচ বর্তমান খরচের চেয়ে দ্বিগুণ ধরা ছিল। পরে সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়েছে।মামুন-আল রশীদ, সদস্য, পরিকল্পনা কমিশন
প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫১ হাজার গরিব মানুষ বাছাই করা হবে। একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষের আচরণ পরিবর্তন করা হবে। এ দুটি কাজ করতে খরচ হবে ৪০ কোটি টাকা। প্রাথমিক সমীক্ষা, নকশা ও সুপারভিশন কাজের পরামর্শকের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। এভাবে এত টাকা রাখায় প্রশ্ন তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, বিধি মেনেই উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণে নেওয়া প্রকল্পের পরামর্শকের খরচ ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) মামুন-আল রশীদ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন খাতের খরচ দেখে আমি নিজেও খবর নিয়েছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে খরচের বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা বলেছে, এর আগে এসব খাতে খরচ বর্তমান খরচের চেয়ে দ্বিগুণ ধরা ছিল। পরে সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়েছে।’
মামুন-আল রশীদ আরও বলেন, ‘মানুষের আচরণ পরিবর্তন করা হবে বলতে তারা বুঝিয়েছে, কোভিড সম্পর্কে মানুষকে বিভিন্ন ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে সচেতন করে তোলা হবে। তবে এটা ঠিক, বিভিন্ন খাতে খরচের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে আমাহাত ধোয়া ও ল্যাট্রিন নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শকের পেছনে ৫৬ কোটি, আচরণ পরিবর্তন ও গরিব মানুষ বাছাইয়ে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।দের আরও সচেতন হওয়ার সুযোগ আছে।’
হাত ধোয়া ও ল্যাট্রিন নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শকের পেছনে ৫৬ কোটি, আচরণ পরিবর্তন ও গরিব মানুষ বাছাইয়ে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
৫৬ কোটি টাকা খরচে কী কী কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল একটি ধারণা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ, কেনাকাটা, পানি সরবরাহ, নজরদারি ও মূল্যায়ন, পরিবেশগত দিক, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ভূতত্ত্ব বিষয়ের জন্য একজন করে সাতজন পরামর্শক নিয়োগ করা হবে।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলক নলকূপ, ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল, পানির স্তরের অবস্থান ও পরিমাণ নির্ণয়ের জন্যও পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য যে সমীক্ষা করা হবে, সে জন্য পরামর্শকের প্রয়োজন হবে। লার্জ পাইপড ওয়াটার স্কিমের স্থান নির্বাচন, পাবলিক টয়লেট ও কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেটের নকশা প্রণয়নের জন্যও থাকবে পরামর্শক। সব মিলিয়ে পরামর্শকের পেছনে মোট ৫৬ কোটি টাকা খরচ হবে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হিসেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো; স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও গণজমায়েত হওয়ার স্থানে হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণ এবং দরিদ্র জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপনের কথা বলেছে। একই সঙ্গে আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের নির্বাচিত গ্রামগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করার কথাও বলা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় পানির সুবিধাসহ হাত ধোয়া স্টেশন নির্মাণ করা হবে ৮৮২টি। নির্বাচিত এলাকায় অতিদরিদ্রদের জন্য ৩ লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি টয়লেট, ৭৮টি লার্জ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, কমিউনিটি পর্যায়ে ৩ হাজার ৩৬৪টি পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩৫২টি পাবলিক স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ৫০০টি স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে টয়লেট নির্মাণে খরচ হবে ৭৭৩ কোটি টাকা।