চীন ও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারেনি।
বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শিথিল হয়েছে অনেক বিধিনিষেধ। মানুষও কেনাকাটা বাড়িয়েছে। তাতে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক করোনা সংক্রমণ এখনো ১২ হাজারের ওপরে। দিনে মারা যাচ্ছেন ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড গত বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ১২৬ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে সেটি সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩০৭ কোটি ডলার হয়েছে। তাতে চীন ও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। বাংলাদেশ এই সুবিধা নিতে পারেনি, উল্টো এই সময় রপ্তানি কমেছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গত বছর ৬ হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। ২০১৯ সালের চেয়ে এই আমদানি ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের বা ১৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছেন। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের রপ্তানি কমলেও চীনের রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে চীন ৪৬৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে ভিয়েতনাম জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৪৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি ৪১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। সেই হিসেবে চলতি বছর তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারের ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশই ভিয়েতনামের দখলে। চীনের ২৪ শতাংশ আর বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মতোই ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভারত ১৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করলেও তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১০ শতাংশ কম। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ১২৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত মে মাসে পবিত্র রমজান ও ঈদের কারণে রপ্তানি কিছুটা কম হয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, জুলাই-আগস্ট থেকে রপ্তানি বাড়বে। কারণ, স্বাভাবিক সময়ের মতো না হলেও ভালো ক্রয়াদেশ আসছে। চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের বেশ কিছু ক্রয়াদেশ আমাদের দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ক্রয়াদেশ এলেও ক্রেতারা পোশাকের মূল্য আগের চেয়ে কম দিতে চাচ্ছেন। অথচ আগের তুলনায় সুতার দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে অনেক ক্ষেত্রে পোশাকের উৎপাদন খরচের কাছাকাছি মূল্য দিতে চাচ্ছে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সে কারণে অনেক ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে চীনের হারানো ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। তাতে সে বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত।