সিপিডি–বিলসের সংলাপ

শ্রমিকেরাই এখন বেশি ঝুঁকিতে

ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বলেন, বিধিনিষেধের কারণে শ্রমিকেরা এখন চাকরি হারানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন।

  • শ্রমিকেরা প্রতিদিন ৩-৪ মাইল হেঁটে কারখানায় যান।

  • পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

  • প্রণোদনা প্রদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই।

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ আরোপ করায় দেশের শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। তাঁরা এখন চাকরি হারানো ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছেন। সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচিতেও তাঁরা উপেক্ষিত।

গতকাল শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত ‘কোভিডকালীন সময়ে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার: ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জোর দেন। তিনি বলেন, কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের আনা–নেওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা উচিত। কারখানায় নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি শ্রমিকদের বাসার পরিবেশ কতটা নিরাপদ আছে, তা–ও দেখতে হবে। এই মুহূর্তে এসব জরুরি।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদের মতে, কারখানা ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকের বাসস্থান নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কাজ করতে পারে। কোভিডকালে এসব নিয়ে খুব বেশি আলোচনা দেখা যায়নি। করোনার সময়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

সংলাপের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী প্রশ্ন তোলেন, ‘একজন শ্রমিককে যদি প্রতিদিন তিন-চার মাইল হেঁটে কারখানায় আসতে হয়, আবার একই পথ হেঁটে ফিরে যেতে হয়, তাহলে তাঁর কাছে কতটা উৎপাদন আশা করেন?’ তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা মালিকদের জন্য খুব কঠিন কাজ নয়। তিনি সংকট মোকাবিলায় সামাজিক সংলাপ আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন বলেন, যখন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তখন শ্রমিকদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা করেনি মালিকপক্ষ।

বিধিনিষেধ আরোপের সময় শ্রমিকদের স্বার্থ দেখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সরকার সর্বাত্মক লকডাউন দিল, কিন্তু সব কারখানা চালু রাখা হলো। সে জন্য পোশাকশিল্পের ৪৫ লাখ শ্রমিককে কারখানায় যেতে হয়।

‘গণপরিবহন না থাকায় দীর্ঘ পথ হেঁটে কারখানায় যান শ্রমিকেরা। এতে তাঁদের সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। মালিকপক্ষকে পরিবহনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে বাধ্য করতে হবে।’ এভাবেই নিজের মত দেন প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মন্টু ঘোষ।

সাংসদ শিরিন আখতারের মতে, লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও মানুষ কেন বের হচ্ছে, তা ভেবে দেখতে হবে। সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন তাঁরাই। দেড় কোটি মানুষ গরিব হয়ে গেছে। যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য সরকার কী করছে?

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন। এতে তিনি বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, করোনা সংকটে শহরে ৬৭ শতাংশ কর্মজীবী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন। তিনি আরও বলেন, করোনা সংকটে শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। শ্রমিকদের কাছে প্রণোদনার পর্যাপ্ত অর্থ পৌঁছায় না, আবার পর্যাপ্ত বরাদ্দও ছিল না। শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে বলার মতো ট্রেড ইউনিয়নও নেই। মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ ইউনিয়নভুক্ত। তিনি এমন একটি সংকট মোকাবিলায় সামাজিক সংলাপের তাগিদ দেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমো পৌতিয়ানেন প্রমুখ।