লোকসানে ৮৩% প্রতিষ্ঠান

  • করোনাকালে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন বিপদে পড়েছে, তা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের আইএফসি সমীক্ষা করেছে।

  • ৩৭% কর্মী বেকার হয়েছেন।

  • ৯৪% প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে।

  • মাত্র ২% সরকারি সহায়তা পেয়েছে।

করোনার সময় দেশের ৮৩ শতাংশ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান (এমএসএমই) লোকসানে পড়েছে। রপ্তানিমুখী কারখানা, বিশেষ করে পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৬ শতাংশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়া বা বেচাকেনা কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।

আইএফসির সমীক্ষায় বলা হয়, করোনার সময়ে এমএসএমই খাতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। যদিও লকডাউন উঠিয়ে দেওয়ার ফলে কিছু লোক কাজে ফিরেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ফলে ৭০ শতাংশ কর্মীর চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। গত জুন ও আগস্ট মাসের মধ্যে দেশের ১২টি জেলার পাঁচ শতাধিক এমএসএমই এই জরিপে অংশ নেয়। জরিপে পোশাক, কৃষি, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেশি ছিল। জরিপের শিরোনাম ‘বিজনেস পালস সার্ভে: ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ অন এমএসএমই ইন বাংলাদেশ’। কোভিড-১৯–এর কারণে দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, সেই চিত্র এ জরিপে উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সমীক্ষাটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার সময় আগের এক মাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশ্ন করা হয়। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২০ শতাংশ আসে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রায় ২ কোটি নারী-পুরুষ এই খাতে কাজ করেন। আইএফসির সমীক্ষায় বলা হয়, করোনার সময়ে এমএসএমই খাতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। যদিও লকডাউন উঠিয়ে দেওয়ার ফলে কিছু লোক কাজে ফিরেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ফলে ৭০ শতাংশ কর্মীর চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, করোনাকালে ৭৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। ৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে খোলা রাখতে সমর্থ হয়েছেন মালিকেরা। সার্বিকভাবে ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। গ্রামের চেয়ে শহরের প্রতিষ্ঠানই বেশি বন্ধ ছিল।

সমীক্ষায় বলা হয়, চাহিদা না থাকায় ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমে যায়। আর ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের প্রবাহ কমে যায়।

করোনা সংকট থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএফসি। বিশেষ করে নতুন ঋণ পাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। ভর্তুকি হারে সুদের হার নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। কারণ, সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে মাত্র ২ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির পর তাঁরা সরকারের কাছ থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। সরকারি সহায়তা না পাওয়ার কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত প্রচার-প্রচারণার অভাবকেই যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়, করোনাকালে ৭৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। ৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে খোলা রাখতে সমর্থ হয়েছেন মালিকেরা। সার্বিকভাবে ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। গ্রামের চেয়ে শহরের প্রতিষ্ঠানই বেশি বন্ধ ছিল। তবে জরিপে অংশ নেওয়া পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৭ শতাংশ বন্ধ রাখা হয়।

করোনার কারণে বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে কর্মীদের কর্মঘণ্টা কমাতে বাধ্য হন মালিকেরা। এমন চিত্র উঠে এসেছে আইএফসির ওই সমীক্ষায়। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অন্তত একজন কর্মীর কর্মঘণ্টা কমিয়েছে। সার্বিকভাবে ১২ শতাংশ স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী কর্মীর কর্মঘণ্টা কমেছে।

কোভিড ১৯ বাংলাদেশের ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীদের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই সংকট কাটাতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন

তাহলে সামনের দিনগুলো কেমন কাটবে? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয় জরিপে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া উত্তরদাতারা আগামী ছয় মাস নিয়ে আশাবাদী হতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, বিক্রি ও কর্মসংস্থান কোনোটিই আগের চেয়ে বাড়বে না, বরং কমবে। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলার শঙ্কা আছে।
করোনা সংকটে ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে নতুন সামাজিক মাধ্যম, অ্যাপসসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছে।

আইএফসি পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, কোভিড ১৯ বাংলাদেশের ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীদের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই সংকট কাটাতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে হবে। বিশেষ করে নিশ্চিত করতে হবে তাদের ঋণপ্রাপ্তি।