খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার

লিটারে ৯ টাকা কমেছে সয়াবিন

সয়াবিনের পাশাপাশি পাম তেলের দামও কমেছে। লিটারে ১৪০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১২৬ টাকা। সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৪১ টাকায়।

সয়াবিন তেল
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দেশের পাইকারি বাজারে সয়াবিনের দর বাড়ছিল। সরবরাহও কমছিল। ফলে এ মাসের শুরুতে পাইকারি বাজারে প্রতি লিটারে দর ওঠে প্রায় ১৫০ টাকা। গতকাল বুধবার তা কমে ১৪১ টাকায় নেমে আসে।

ব্যবসায়ীরা জানান, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে পরিশোধন কারখানাগুলো থেকে নিয়মিত সয়াবিন তেলের সরবরাহ না আসার কারণে সংকট

তৈরি হয়। এতে দামও বেড়ে যায়। এখন কারখানাগুলো প্রতিদিনই তেল সরবরাহ করছে। তাই দামও কিছুটা কমেছে।

এদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি মোকামে দাম কমার এ খবরের সঙ্গে আরেকটি খবর দিয়েছে সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। গতকাল বিকেলে বিভাগটি ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ফলে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমে ৫ শতাংশ হয়েছে, যা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর আগে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়।

দাম কমার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি এবং আমদানিতে ভ্যাট কমানো হয়েছে। বিশ্ববাজারেও সয়াবিনের মূল্য কিছুটা সংশোধন হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে ৭৫ হাজার টন সয়াবিন আসা এবং বাজারে অভিযানের কারণেও পাইকারি পর্যায়ে প্রভাব পড়েছে।

খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহেদ উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দাম কমার যত উপাদান আছে, সবই কার্যকর হয়েছে গত এক সপ্তাহে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম সংশোধন হয়েছে। দেশে ভ্যাট কমেছে। আগের চেয়ে সরবরাহ বেড়েছে। অর্থাৎ যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা কেটে যাওয়ায় দাম কমেছে।

এবার বিশ্ববাজারে কত কমেছে দেখা যাক। ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা পণ্য বেচাকেনার বাজার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) প্রতি টন সয়াবিন বিক্রি হয় ১ হাজার ৮১১ ডলারে, যা ১৫ মার্চ ১ হাজার ৬৩৭ ডলারে নেমে আসে। অর্থাৎ টনপ্রতি ১৭৪ ডলার কমেছে। বিশ্ববাজার থেকে এ দরে সয়াবিন তেল কেনার পর জাহাজভাড়াসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হয়।

দেশে বছরে সয়াবিন তেলের চাহিদা ১২ লাখ টন। এর বড় অংশই মোড়কজাত করে বিক্রি হয়। গ্রামে–গঞ্জে অনেক জায়গায় খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়। আর পাম তেলের চাহিদা ১৩ লাখ টনের মতো। পাম তেল রেস্তোরাঁ ও খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানায় বেশি বিক্রি হয়। খোলা আকারে বেশি বিক্রি হয় পাম তেল।

খাতুনগঞ্জে সয়াবিনের পাশাপাশি পাম তেলের দামও কমেছে। এ মাসের শুরুতে লিটারে পাম তেলের দাম উঠেছিল ১৪০ টাকা। এখন লিটারে ১৪ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকায়।

পাইকারি বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা তেল সাধারণত গ্রামে–গঞ্জে বেশি বিক্রি হয়।শহরে খুচরায় খুব কম দোকানেই বিক্রি হয়।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাজারে খোলা সয়াবিন ও খোলা পাম তেল পাওয়া যায়নি। তাই টিসিবি প্রতিবেদনে তা জানাতে পারেনি।

সরেজমিনে খাতুনগঞ্জে গিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখা গেছে।

কে কত দামে ভোজ্যতেল বেচাকেনা করল সেই হিসাবই নিচ্ছিলেন তাঁরা। মেসার্স হরিমোহন বিশ্বাস নামের এক প্রতিষ্ঠানকে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকাও তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা হয়।

দাম কমলে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে। ভোক্তারা খুশি হন। খাতুনগঞ্জে গিয়ে টের পাওয়া গেল সেটির। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে জরিমানা পরিশোধ করে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন মেসার্স হরিমোহন বিশ্বাসের প্রতিনিধি দুলাল রায়। তিনি বলেন, ‘গত ২ ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার ৩৭০ টাকা মণে সরবরাহ আদেশ কিনি। এরপর বাজার পড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ১৫০ মণের একটি সরবরাহ আদেশে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা চোখের পলকে নাই হয়ে গেছে। আমরা শেষ।’