করোনাকালে প্রণোদনা তহবিল থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের জন্য দেওয়া ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধে বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে কারণে ব্যাংকগুলো ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিতে শুরু করেছে। প্রক্রিয়াটি পেছাতেই আজ বৃহস্পতিবার খোলা চিঠি দিয়েছেন রুবানা হক।
বিজিএমইএর সভাপতি চিঠিতে বলেছেন, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে তৈরি পোশাকশিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিত অথবা ঋণের অর্থ পরিশোধে অতিরিক্ত এক বছর সময় বাড়ানো না হলে পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে। বর্তমানে প্রণোদনার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা দুই বছর। তার মধ্যে প্রথম ছয় মাস কিস্তি দিতে হয়নি, যা ইতিমধ্যে পার হয়েছে।
পোশাকশিল্প আজ মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে।রুবানা হক, সভাপতি, বিজিএমইএ
করোনার কারণে গত মার্চে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। পরে সেই তহবিলের আকার বেড়ে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। সেই তহবিল থেকে ঋণ পেয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানামালিক। প্রথম তিন মাসের জন্য ২ শতাংশ ও চতুর্থ মাসের জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ সেবা মাশুল দিতে হবে তাঁদের।
চিঠির শুরুতে বিজিএমইএর সভাপতি লেখেন, পোশাকশিল্প আজ মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ ও প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়া হওয়া এবং নির্দয়ভাবে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পেড়েছে খাতটি। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। শিল্প ভালো করছে ও সরকারের কাছ থেকে সব সহযোগিতা পাচ্ছে, এমন ধারণা পোষণ করছেন। সেটির প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়া অন্তত জরুরি।
খাতের প্রকৃত অবস্থা বোঝাতে রুবানা হক পোশাক রপ্তানি হ্রাসের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুনের পর ওভেন পোশাকের রপ্তানি খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। ডিসেম্বরে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে। সেই তুলনায় নিট পোশাকের রপ্তানিমূলক স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। ডিসেম্বরে নিটের রপ্তানি কমেছে দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের প্রভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি ও চাহিদার ওপর কী প্রভাব ফেলছে, সেটি সমগ্র বিশ্ব দেখছে। বড়দিনের বিক্রিতে স্মরণকালের মন্দা গেছে। এসব কারণে সেপ্টেম্বর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। করোনার টিকার প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। আমাদের শঙ্কা, পোশাক রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবণতা আগামী এপ্রিল পর্যন্ত থাকতে পারে।’
এদিকে বিজিএমইএ গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের অর্থ পরিশোধে দুই বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর সময় দাবি করে। একই সঙ্গে তাদের দাবি, ঋণ পরিশোধে ছয় মাসের গ্রেড পিরিয়ডকে ১২ মাসে উন্নীত করা হোক।
করোনার প্রথম ঢেউয়ে ক্রয়াদেশ বাতিল ও কারখানা বন্ধ থাকায় গত এপ্রিলে পোশাক রপ্তানিতে ধস নামে। ওই মাসে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের মাসে হয় ১২৩ কোটি ডলারের। তাতে গত অর্থবছর পোশাক রপ্তানি কমে যায় ১৮ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছর ঘুরে দাঁড়াতে থাকে রপ্তানি। মাঝে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি উন্নতি হলেও আবার ধস নামে। শেষ পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম।