কাঁচামালের দাম স্বাভাবিক হলে তৈরি পোশাক রপ্তানির আর্থিক মূল্য কমে যেতে পারে।
করোনার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে সুসময় পার করছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হওয়া প্রতি ডজন পোশাকের দাম বেড়েছে গড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বেড়েছে মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ। বাড়তি এই দামের পেছনে রয়েছে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি। তার মানে, কাঁচামালের দাম স্বাভাবিক হলে রপ্তানির আর্থিক মূল্য কমে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে চলতি ও গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত চার মাস সময়ের তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নিয়েছে সংস্থাটি।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২১-২২ প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ করতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরে সিপিডি। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
কাঁচামালের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ধাপে ধাপে কমলে প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ শতাংশ বাড়লেও ক্রেতারা পোশাকের দাম গড়ে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করেনি।ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি,বিকেএমই
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশটিতে ২৬৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর একই সময়ে বাজারটিতে ১৯৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
জানতে চাইলে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, পোশাক রপ্তানির মূল্য ও পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। তবে পোশাকের মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ, কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া। তার মানে, বাড়তি রপ্তানি আয়ের সুফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিপিডি বলছে, গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হওয়া প্রতি ডজন পোশাকের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। তার মধ্যে নিট পোশাকের দাম ১৪ শতাংশ বাড়লেও ওভেন পোশাকের দাম বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
অন্যদিকে অঞ্চল হিসেবে ইইউতে বেশি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ইইউতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৭৬০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।
সিপিডি বলছে, গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ইইউর বাজারে রপ্তানি হওয়া প্রতি কেজি পোশাকের মূল্য বৃদ্ধির হার দশমিক ৯ শতাংশ। তার মধ্যে নিট পোশাকের দাম ৩ শতাংশ বাড়লেও ওভেন পোশাকের দাম কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশের মতো।
এ বিষয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁচামালের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ধাপে ধাপে কমলে প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ শতাংশ বাড়লেও ক্রেতারা পোশাকের দাম গড়ে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করেনি। ফলে কাঁচামালের দাম হ্রাস পেলে সেটি আমাদের জন্য ইতিবাচকও হতে পারে।’