ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বন্ধ পাট ও চিনিকল চালুর দাবি

পাটকল–চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক–কৃষক–ছাত্র–জনতা ঐক্যের উদ্যোগে গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউতে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

বন্ধ পাটকল ও চিনিকল পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, প্লাস্টিক ও পলিথিন পণ্যের সম্পূর্ণ বিকল্প হিসেবে পাটপণ্য ব্যবহার করা সম্ভব। আর বেসরকারি রিফাইনারি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও চিনিকলগুলো চালু রাখা প্রয়োজন। ফলে এসব কারখানা চালুর জন্য আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দেরও দাবি জানান তাঁরা।

আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে ‘দেশের মৌলিক শিল্প রক্ষায় বন্ধ পাট ও চিনিকল চালু ও তার বিকাশে প্রস্তাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে পাটকল–চিনিকল রক্ষায় শ্রমিক–কৃষক–ছাত্র–জনতা ঐক্য।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, লোকসানের অজুহাতে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হলেও বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। ২০২০ সালে ২৬টি সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হলেও দেশে বেসরকারি পাটকলের সংখ্যা বেড়েএখন ২৮১টি। আর একই বছরের শেষের দিকে ছয়টি রাষ্ট্রীয় চিনিকল বন্ধ করে দেয় সরকার।

পাট ও পাটজাতীয় দ্রব্যের চাহিদা কমবে না; বরং দিন দিন আরও বাড়বে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সেমিনারে তিনি বলেন, পাট থেকে অনেক ধরনের জিনিস তৈরি করা সম্ভব। প্লাস্টিক ও পলিথিনের তৈরি পণ্য বিকল্প হিসেবে পাট দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। এর বাইরেও কাপড়সহ অনেক ধরনের জিনিস তৈরি করা যায়। পাট গবেষণা কেন্দ্র এ–বিষয়ক তালিকাও দিয়েছে। পাটশিল্পের বিকাশে রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ছয়টি রাষ্ট্রীয় চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর এখন বেসরকারি রিফাইনারি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে চিনির বাজার। চিনির বাজার যেন সরকারের হাতে থাকে, এ জন্য চিনিকলগুলো চালু করা দরকার।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) তাদের প্রতিবেদনে পাটকলের লোকসানের কারণ হিসেবে অব্যবস্থাপনা, সময়মতো পাট কেনায় টাকা ছাড় না দেওয়া, পুরোনো যন্ত্রপাতি, মাথাভারী প্রশাসন, নিম্নমানের পাট, ক্রয়–বিক্রয়ে দুর্নীতি, কাঁচা পাটের অভাব, ইউনিয়নের দৌরাত্ম৵ এবং মিছিল–মিটিং ও আন্দোলন সংগ্রামকে দায়ী করেছে।

তাই পাটকল বন্ধের পেছনে সামগ্রিকভাবে অব্যবস্থাপনা দায়ী বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কলকারখানা কর্তৃপক্ষের যে অস্বচ্ছ ও দুর্নীতির সম্পর্ক, সেটাই অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী।

সেমিনারে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান বলেন, ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে পাটকল আধুনিকায়ন করা যেত, কিন্তু তা করা হয়নি। অথচ পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ৫০ বছর আগের যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন করলে লোকসান হবে। সরকার যন্ত্রপাতি নবায়নের জন্য টাকা না দিয়ে বরং মিলগুলোকে বেসরকারি খাতে দিয়ে দিতে চায়।

সেমিনারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, পাটকলের লোকসানের জন্য যে ৯টি কারণের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর জন্য দায়ী বিজেএমসি ও সরকার। অথচ তাদের কিছুই হলো না। কিন্তু ছাঁটাই করার পর পাওনা টাকাও এখন পর্যন্ত বুঝে পায়নি শ্রমিকেরা।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জুটমিল শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম। পাটকল রক্ষায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সমন্বয়ক রুহুল আমিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।