যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পেয়েছে, তা মোট কর্মসংস্থানের মাত্র ৮ শতাংশ কর্মজীবীর উপকারে এসেছে।
প্রণোদনার ৯টি প্যাকেজের মধ্যে একটি মাত্র প্যাকেজের মাধ্যমে শ্রমিকদের সরাসরি বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে।
প্রণোদনার অর্থ দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান হবে নাকি পুরোনো চাকরিকে সুরক্ষা দেবে, তা প্যাকেজের নির্দেশিকায় বলা হয়নি।
করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৫৬ শতাংশ অর্থই প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। প্রণোদনার ৯টি প্যাকেজের মধ্যে একটি মাত্র প্যাকেজের মাধ্যমে শ্রমিকদের সরাসরি বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রণোদনার অর্থ দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান হবে নাকি পুরোনো চাকরিকে সুরক্ষা দেবে, তা প্যাকেজের নির্দেশিকায় বলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ও অক্সফাম আয়োজিত ‘কর্মসংস্থানে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রভাব: পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে। সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার টাকা পেয়েছে, তা মোট কর্মসংস্থানের ৮ শতাংশ বা কর্মজীবীদের উপকারে এসেছে। পুরো টাকা খরচ হলে তা ১২ শতাংশে উন্নীত হবে।
প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে আরও বলা হয়, করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এশিয়ার কোন কোন দেশ কত প্রণোদনা দিল, এর তুলনামূলক চিত্রও দেখানো হয়েছে। সেখানে এশিয়ার ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২২তম অবস্থানে। আর মাথাপিছু প্রণোদনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২৩তম।
প্যাকেজ নিয়ে সিপিডির মূল্যায়ন হলো বড় উদ্যোক্তারা সহজেই ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু ছোট উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পাচ্ছেন না। কারণ, তাঁদের পক্ষে জামানত দেওয়া কঠিন। সামনে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে, তাই প্যাকেজে অর্থের পরিমাণও বাড়াতে হবে। করোনা সংকট মোকাবিলায় এ পর্যন্ত সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে বাংলাদেশের সামনে একটি মাত্র চিন্তা হলো কর্মসংস্থান। করোনা সংকটে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজের ‘টোটকা ওষুধ’–এর পরিবর্তে টেকসই কাঠামো লাগবে। করোনা কেটে গেলেও দুর্বল মানুষের ওপর প্রভাব শেষ হবে না অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একটি কর্মপরিকল্পনা থাকা উচিত।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা বলছে, অনেকেই প্রণোদনার টাকা পাননি। স্থানীয় সরকারের দুর্বলতার কারণেও প্রণোদনার অর্থ পুরোপুরি কাজে লাগেনি।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কর্মসংস্থানের চাহিদা অনুযায়ী প্রণোদনা প্যাকেজে অর্থ দেওয়া হয়নি। প্রবাসী শ্রমিকেরা ফেরত আসছেন কিংবা যাঁরা দেশে চলে আসছেন, তাঁরা আবার বিদেশে যেতে পারছেন না। এই শ্রেণিই শ্রমবাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম বলেন, করোনায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। কর্মসংস্থানে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়; বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, প্রেসক্লাবের সামনে ইদানীং একটা ছেলে পান-বিড়ি বিক্রি শুরু করেছে। অথচ সে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। করোনার কারণে তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে জীবিকার সন্ধানে নামতে হয়েছে।
এপ্রিল-মে মাসে তৈরি পোশাক খাতে চাকরি হারানো অনেকেই কাজে ফিরতে পারছেন না। বিশেষ করে যাঁদের বয়স একটু বেশি, তাঁদের ‘না’ করে দেওয়া হচ্ছে। চলমান গবেষণার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ কথা জানান বিআইডিএসের গবেষক নাজনীন আহমেদ।
বরিশালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাসিনা বেগম জানান, দু–একটি ব্যাংকে তিনি ঋণের জন্য গিয়েছিলেন। তাঁকে ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কাছে প্রণোদনার টাকা আসেনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অক্সফামের ব্যবস্থাপক শোয়েব ইফতেখারসহ অর্থনীতিবিদ, গবেষক, এনজিও কর্মীরা।