ফরিদপুরের বাজার

পাটের দামে হঠাৎ উত্থান–পতন

প্রথম আলো ফাইল ছবি

হঠাৎ করে পাটের দাম বেড়ে যাওয়ার পর আবার মণপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কমে গেছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হলো, পাটকলমালিকেরা সিন্ডিকেট করে কেনা পাটের টাকা না দেওয়ায় এবং পাট ক্রয় বন্ধ রাখায় দাম কমেছে।

ফরিদপুরের প্রসিদ্ধ পাটের মোকাম কানাইপুর বাজারে গত বুধবার মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও সাড়ে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু পাটের দাম বাড়লেও তাতে প্রান্তিক কৃষকেরা কোনো সুবিধা পাননি। কারণ, তখন কৃষকের ঘরে পাট ছিল না। মধ্যস্বত্বভোগী ও মজুতদারেরাই লাভবান হয়েছেন।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক আশুতোষ বিশ্বাস জানান, ফরিদপুরে ২০১৯-২০ মৌসুমে ৮৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর পাট উৎপন্ন হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলা বাজার কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে পাটের দাম বৃদ্ধি পায়। তবে পাট রপ্তানিতে সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় দাম কমেছে।

ফরিদপুরের কানাইপুর বাজারের ব্যবসায়ী নিরঞ্জন সাহা বলেন, পাটকলমালিকেরা পর্যাপ্ত মজুত থাকার কথা বলে পাট কেনা বন্ধ রাখায় দাম কমেছে।

আরেক ব্যবসায়ী মো. খোকন মাতুব্বর বলেন, রপ্তানিকারকেরা পাট কিনে চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। এ জন্য দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। ওই প্রক্রিয়া এখন বন্ধ। ফলে দাম কমছে। তবে দাম কমার পেছনে পাটকলমালিকদেরও কারসাজি আছে। তাঁরা একজোট হয়ে বাজারে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছেন এবং মজুত থাকার কথা বলে পাট কেনা বন্ধ রেখেছেন। এতে দাম আরও কমবে।

এদিকে পাটকলমালিকেরা কোনো কারসাজি বা সিন্ডিকেট করেননি বলে দাবি ফরিদপুরের অন্যতম পাটকলমালিক করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন সিন্ডিকেট করব। মিলমালিকদের পাটের চাহিদা পূরণ হয়ে গেছে, প্রয়োজন মিটে গেছে। এ জন্য পাট কিনছে না।’ কোনো কোনো পাটকলমালিক ব্যবসায়ীদের পাটের দাম না দেওয়া প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে তা সংশ্লিষ্ট মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার জায়কাইল গ্রামের কৃষক সোবাহার মুসল্লি বলেন, ‘অন্যান্য বারের চেয়ে এ বছর আমরা পাটের দাম ভালো পেয়েছি। এক মণ পাট উৎপাদনে এবার খরচ পড়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা, বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকায়। তবে আমরা পাটের বাড়তি দাম পাইনি।’