দেশের আবাসন খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে আবাসন খাতে ব্যবসা করছে। এ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রমজানুল হক নিহাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুর রহমান।
প্রথম আলো: আবাসন ব্যবসার ভবিষ্যৎ বা সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
রমজানুল হক: বাংলাদেশে আবাসন ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। বর্তমান সরকার সারা দেশে যেভাবে অবকাঠামো গড়ে তুলছে, তাতে ভবিষ্যতে আবাসন ব্যবসার পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। নতুন নতুন শিল্পকারখানাও গড়ে উঠছে। যে এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে, সেখানেই আবাসনের চাহিদা বাড়ছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই ওই এলাকা ঘিরে আবাসনব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যোগাযোগব্যবস্থা ঠিক থাকলে এই আবাসন গড়ে তোলা সহজ।
প্রথম আলো: ব্যবসায়ী হিসেবে আপনারা কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন?
রমজানুল হক: আবাসন ব্যবসায় সমস্যা অনেক। এসব সমস্যা নিয়ে অনেকবারই আমরা কথা বলেছি। আমার মনে হয়, এ খাতের সমস্যা কমবেশি সবারই এখন জানা। এ সমস্যা সমাধানে আমি মনে করি, ব্যবসায়ী ও গ্রাহক সহজে কীভাবে ব্যাংকঋণ পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমি বলছি না, নিয়ম ভেঙে কিছু করতে হবে। নিয়মের মধ্যে থেকেই ব্যাংকঋণ পাওয়া আরও সহজ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। একটা সময় মানুষ পায়ে হেঁটে ব্যাংকিং করত। আর এখন ঘরে বসেই মানুষ গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির বিল পরিশোধ করছে। পদ্ধতি যদি সহজ হয়, মানুষ বিনিয়োগ করবেই। সে জন্য আবাসন ব্যবসায়ী ও গ্রাহকের জন্য ব্যাংকঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার।
প্রথম আলো: দেশে কর্মসংস্থান তৈরিতে আবাসন খাত কতটা ভূমিকা রাখছে?
রমজানুল হক: আবাসন খাতে দিন দিন কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়ছে। বহুতল একটা ভবন করতে গেলে প্রচুর মানুষের প্রয়োজন হয়। আগে আমরা সর্বোচ্চ ১০তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করতাম। এখন ২০তলা ভবন হচ্ছে। সামনে ৪০ থেকে ৫০তলা ভবন হবে। একবার ভাবুন তো কত মানুষের কর্মসংস্থান হবে সেখানে। আমরা যে বহুতল ভবন করছি, তা খুবই চ্যালেঞ্জের। আগের মতো রাজমিস্ত্রি এসে ঠুকঠুক করবে, এখন আর সেই দিন নেই। আমাদের মাধ্যমে দেশে দক্ষ শ্রমিক তৈরি হচ্ছে। শ্রমিকের দক্ষতা বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে।
প্রথম আলো: প্লট ও ফ্ল্যাট কিনে মানুষের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এই জায়গা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
রমজানুল হক: আমরা যারা আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, আমাদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আছে। তারা আমাদের পর্যবেক্ষণ করছে। আমি মনে করি, তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে, কাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে না, এ বিষয়টা আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেটি করতে পারলে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজ ডিজিটালাইজড করতে হবে। গ্রাহক যখন ঘরে বসেই সব বিষয় জানতে পারবেন, তখন স্বচ্ছতা বহুগুণ বাড়বে।
প্রথম আলো: সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হলে কী করা উচিত বলে মনে করেন?
রমজানুল হক: জীবনমান উন্নত করতে হলে সবার আগে উন্নত আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভালো থাকার ব্যবস্থা পেলে মানুষ ভালো চিন্তা করতে পারে। এতে জীবনধারণেও পরিবর্তন আসে। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারি সংস্থা, ব্যাংক, আবাসন খাতের সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা কি খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হইনি? আমাদের পোশাক বিদেশে দাপিয়ে বেড়াবে—এটা কখনো চিন্তা করেছি? সুতরাং আবাসন নিয়ে একসঙ্গে পরিকল্পনা করলেই সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা অসম্ভব কিছু নয়।