বিজিএমইএ

নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, জটিলতার আশঙ্কা

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের আর তিন সপ্তাহ বাকি। দুই প্যানেলের ৭০ জন প্রার্থী প্রচার–প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটে যখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে, তখনই হঠাৎ পদত্যাগ করলেন নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন সংগঠনটির সাধারণ সদস্যরা।

সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারের পদত্যাগ সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সেটি সম্ভব না হলে জরুরি সাধারণ সভা করে নির্বাচন বোর্ডের অপর দুই সদস্যের মধ্যে একজনকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক

বিজিএমইএর ২০২১-২৩ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। দুই মাস ধরে তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ভোটার তালিকা, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। হঠাৎ আজ বুধবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকের কাছে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। সেখানে তিনি লেখেন, ব্যক্তিগত কারণে তাঁর পক্ষে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।

নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের সত্যতা নিশ্চিত করে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারের পদত্যাগ সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সেটি সম্ভব না হলে জরুরি সাধারণ সভা করে নির্বাচন বোর্ডের অপর দুই সদস্যের মধ্যে একজনকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হবে না।’

চলতি বছর এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার পথে যাননি জাহাঙ্গীর আলম। সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর দল। সম্মিলিত ও স্বাধীনতা পরিষদ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগামী ৪ এপ্রিল বিজিএমইএর পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকছে মূলত দুই দল বা জোট।

বিজিএমইএতে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সে সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম। তারপরের নির্বাচনের আগেই সমঝোতার মাধ্যমে সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত করতে চুক্তি করে এই দুই জোট। দুই মেয়াদের জন্য সেই সমঝোতার প্রথম দফায়, অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। দুই বছরের জন্য গঠিত সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে তিন দফায় ১৯ মাস বাড়তি দায়িত্ব পালন করে। সিদ্দিকুর রহমান কমিটির মেয়াদ আবার বাড়ানোর চেষ্টা করলেও তা রুখে দেন সংগঠনের সাবেক সভাপতিরা।

সিদ্দিকুর রহমান দায়িত্ব ছাড়ার পর সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী কমিটি করার উদ্যোগ নেয় ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ। তবে হঠাৎ ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে স্বাধীনতা পরিষদ নামে নতুন জোট নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। তাদের নানাভাবে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে অপর দুই জোটের নেতারা। জাহাঙ্গীর আলমের সদস্যপদ নিয়েও টান দেন সিদ্দিকুর রহমান। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ ঢাকায় প্রার্থী দেয়। সে কারণে নিয়মরক্ষার ভোট হয়। অবশ্য সব কটি পদেই জয়ী হয় ফোরাম-সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল।

চলতি বছর এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার পথে যাননি জাহাঙ্গীর আলম। সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর দল। সম্মিলিত ও স্বাধীনতা পরিষদ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগামী ৪ এপ্রিল বিজিএমইএর পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকছে মূলত দুই দল বা জোট। সংগঠনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের বিপরীতে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের ৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা ফারুক হাসান ও ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ বি এম সামসুদ্দিন। বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি রুবানা হক ও তাঁর ছেলে ফোরামের হয়ে নির্বাচন করছেন।

এদিকে হঠাৎ নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের কারণ কী? এ বিষয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরামের একজন নেতা জানান, ঢাকার ভোট গ্রহণ র‌্যাডিসন হোটেলে করার কারণে সম্মিলিত পরিষদ শুরু থেকেই তাঁর (সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার) ওপর নাখোশ। ব্যালেট পেপারে প্রথম ৩৫ জন প্রার্থী তালিকায় থাকবে ফোরাম। লটারির মাধ্যমে এটি হলেও সম্মিলিত পরিষদের নেতারা মেনে নিতে পারছে না। এসব কারণে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্প্রতি খারাপ ব্যবহার করেন পরিষদের কয়েকজন নেতা।

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার প্রথম আলোকে খুদে বার্তায় বলেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন তিনি। কোনো চাপ ছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না।’

অবশ্য নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা ও সভাপতি প্রার্থী ফারুক হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে বলব। কারণ, আমাদের প্যানেল চায়, সময়মতো নির্বাচন হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। প্যানেল লিডার হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। উনার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার প্রথম আলোকে খুদে বার্তায় বলেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন তিনি। কোনো চাপ ছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না।’