স্মরণ: স্যামসন এইচ চৌধুরী

তাঁর আদর্শে এগিয়ে চলছে স্কয়ার

স্যামসন এইচ চৌধুরী
স্যামসন এইচ চৌধুরী

দেশের বরেণ্য শিল্পপতি স্যামসন এইচ চৌধুরীর চলে যাওয়ার নবম বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। তাঁর হাতে গড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপ ঠিকই এগিয়ে চলেছে তাঁর আদর্শে। যার নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাঁর সন্তানেরা।

১৯৫২ সালে ডাক বিভাগের চাকরি ছেড়ে বাবার হোসেন ফার্মেসিতে বসতে শুরু করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। বছর চারেক পর বাবার কাছ থেকে টাকা ধার করে পাবনার আতাইকুলাতেই ইসন্স (ইয়াকুব অ্যান্ড সন্স) নামে ছোট ওষুধ কোম্পানি করেন তিনি। সেটিকে বড় করতে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নেন। কাজী হারুনূর রশীদ, পি কে সাহা ও রাধাবিন্দ রায়কে নিয়ে ১৯৫৮ সালে স্কয়ার নামে ওষুধ কোম্পানি করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তখন তাঁদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা।

চারজনের সমান বিনিয়োগ বলে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় স্কয়ার। ১৯৭১ সালে রাধাবিন্দ রায় নিজের মালিকানার অংশ ছেড়ে দেন। হারুনূর রশিদ ও পি কে সাহার মালিকানার অংশ এখনো রয়ে গেছে। চার বন্ধু মিলে কোম্পানিটি গড়ে তুললেও নেতৃত্বে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। শুরুতে পাবনায় নিজ বাড়ির কাছেই কোম্পানির কারখানা করা হয়। শুরুতে স্কয়ার ফার্মা সিরাপজাতীয় ওষুধ তৈরি করত। ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে কোম্পানির পরিসরও বড় হতে থাকে।

স্কয়ারের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওষুধ দিয়ে শুরু করলেও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবসা বর্তমানে আটটি খাতে বিস্তৃত—স্বাস্থ্যসেবা; ভোগ্যপণ্য; বস্ত্র; মিডিয়া, টিভি ও তথ্যপ্রযুক্তি; নিরাপত্তা সেবা; ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স; হেলিকপ্টার ও কৃষিপণ্য। তাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০। কর্মী বাহিনী ৫৫ হাজারের বেশি।

বর্তমানে বিশ্বের ৪২টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে স্কয়ার। এগুলোর মধ্যে এশিয়ার ১৯টি দেশ, আফ্রিকার ১৩টি, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৩টি, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি এবং যুক্তরাজ্যের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রপ্তানি করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর স্কয়ার ১৪৫ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে। এই আয় তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কয়ার ফার্মার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৭৮২ কোটি টাকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুনাফার পর প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। কোম্পানি তাদের সম্পদমূল্যের হিসাব করেছে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে। বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করা হলে কোম্পানিটির সম্পদমূল্য ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অথচ ১৯৫৮ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে কোম্পানিটি।

স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী অনিতা চৌধুরী (মাঝে) এবং তাঁদের চার ছেলেমেয়ে (বাঁ থেকে) অঞ্জন চৌধুরী, রত্না পাত্র, তপন চৌধুরী ও স্যামুয়েল এস চৌধুরী। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি স্যামসন এইচ চৌধুরীর পরলোকগমনের পর তাঁর সন্তানেরাই স্কয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি স্যামসন এইচ চৌধুরী পরলোকগমন করেন। তাঁর প্রয়াণের পর তাঁর চার ছেলেমেয়ে—স্যামুয়েল এস চৌধুরী, তপন চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী ও রত্না পাত্র এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের অন্যতম পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানকে। নতুন করে যুক্ত হয়েছেন নাতি-নাতনিরা। স্কয়ারকে বহুজাতিক কোম্পানি করার উদ্যোগটি তাঁরাই নিয়েছেন।

স্যামসন এইচ চৌধুরীর গড়ে তোলা স্কয়ার বেশ ভালোভাবেই সামলে নিচ্ছেন তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তারপরও বাবার শূন্যতা অনুভব করেন তাঁরা। গত বছর মার্চে তপন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘যখন বাবার শরীর বেশ খারাপ হয়ে গেল, তখন সবাই তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়িক আলাপ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু আমরা যখন কঠিন সমস্যায় পড়ে যেতাম, তখন বাবাকে বললে দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সমাধান করে দিতেন। আসলে দীর্ঘদিন ব্যবসা করার কারণে সবকিছুই ছিল বাবার নখদর্পণে। আমি সরকারের উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরও যেখানে গিয়েছি, সেখানেই বাবার পরিচয়ে পরিচিত হয়েছি।’