বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা। এ সময়ে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি কার্যক্রমও বন্ধ। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার মধ্যে টিসিবির আগামী দিনের কার্যক্রম নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফয়জু্ল্লাহ।
প্রথম আলো: ভোজ্যতেলের দাম আবার বেড়েছে, সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে। টিসিবির নিয়মিত কার্যক্রম এখন বন্ধ, কবে শুরু হচ্ছে?
মো. আরিফুল হাসান: রমজান মাসে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়েছি। এর মধ্যে ঈদ চলে আসে। এই বিরতিতে প্রস্তুতিটা আরেকটু গুছিয়ে নিয়েছি। ১৬ মে থেকে আবার নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে। টিসিবিকে এখন সক্ষমতার তুলনায় বেশি কাজ করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ লাখ লোককে পণ্য দেওয়া হতো। বাজার অস্থির হলে সেটা ৫০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তে এক কোটি লোককে পণ্য দিতে হচ্ছে। সীমিত লোকবল নিয়ে এ রকম কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা বেশ কষ্টসাধ্য। এর মধ্যেও সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে পণ্য পৌঁছে দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।
বিতরণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ১২ লাখ কার্ড তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ডিজিটাল কার্ড দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে।
প্রথম আলো: টিসিবিতে সয়াবিন তেলের কোনো সংকট আছে কি না? আর আপনারা এখন কোন পণ্যগুলো বিক্রি করবেন?
মো. আরিফুল হাসান: এ মাসে তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করব। পাশাপাশি রোজায় কিছু ছোলা অবিক্রীত থেকে গিয়েছিল। সেগুলোও বিক্রির তালিকায় থাকবে। কেউ নিতে চাইলে নিতে পারবেন। মে মাসের জন্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন আছে গুদামে। আর জুনের জন্য আরও তিন কোটি লিটার সয়াবিন কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অর্থাৎ নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে পরিমাণে সয়াবিনের দরকার তা মজুত আছে। ঈদের আগে ১১০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ২ লিটার সয়াবিন তেল ক্রেতাদের দিয়েছি। এ মাসের দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। বিক্রি শুরু করার আগে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রথম আলো: টিসিবির কার্যক্রম চালাতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?
মো. আরিফুল হাসান: মাঠপর্যায়ে কাজ চালাতে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে জনগণের কাছে পৌঁছানো। কারণ, আমাদের লোকবলের তীব্র সংকট রয়েছে। সবাইকে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের সক্ষমতার তিন গুণ লোকের কাছে পণ্য পৌঁছাতে হচ্ছে। ঈদের আগে এটা করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনসহ অন্যদের সহযোগিতাও নিতে হয়েছে। এ জন্য চলতি মাসে হয়তো এক কোটি লোকের হাতে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে। তা ছাড়া আমাদের গুদামেরও সংকট আছে। ঢাকায় জায়গা ভাড়া নিয়ে কোনোমতে কাজ চালানো গেলেও, আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে সংকট লেগেই আছে। এসব সক্ষমতা বাড়ানো না গেলে এক কোটি লোকের হাতে পণ্য পৌঁছানো বেশ চ্যালেঞ্জের হবে।
প্রথম আলো: এসব সংকট থেকে উত্তরণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
মো. আরিফুল হাসান: জনবল সংকটের কথা আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। ইতিমধ্যে এই সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে। তবে লম্বা প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে। ময়মনসিংহে আমাদের নতুন একটা গুদাম হয়েছে, এতে সংকট কিছুটা কাটবে। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক মাস) পণ্যের মজুত করতে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার গুদামের প্রয়োজন হয়। সেখানে ভাড়া জায়গাসহ এখন আমাদের গুদামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ ছাড়া বিতরণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ১২ লাখ কার্ড তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ডিজিটাল কার্ড দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। তাতে তদারকি কার্যক্রমে সুবিধা হবে।