সস ও কেচাপের বার্ষিক বাজার ২৫০ কোটি টাকার।
বছরে ১৮ হাজার টন টমেটো সস উৎপাদনের সক্ষমতা আছে প্রাণের।
প্লাস্টিকের খাঁচায় থরে থরে সাজানো লাল টমেটো। যন্ত্রে দেওয়ার পর সেই টমেটো পরিষ্কার হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়া। মানুষের হাতের ব্যবহার হচ্ছে শুধু দাগ ধরা টমেটো বাছাইয়ের সময়। কারখানার বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রমিকেরা বাছাই করছেন নষ্ট টমেটো। সেই টমেটো আবার চলে যাচ্ছে আরেক জায়গায়। পরিণত হচ্ছে গোখাদ্যে।
বিশালাকায় যন্ত্রের আরেক পাশে টমেটো থেকে তৈরি করা হচ্ছে পেস্ট। সেখান থেকে আবার টমেটোর বীজ বা বিচি ও খোসা আলাদা করা হচ্ছে। এরপর সেটা ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জীবাণুমুক্ত করে অ্যাসেপটিক ব্যাগে ভরে আরেক কারখানায় পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই তৈরি হচ্ছে টমেটো কেচাপ। সেই টমেটো কেচাপই বোতলজাত হয়ে বিক্রি হচ্ছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। এভাবেই রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রাণের কারখানায় তৈরি টমেটোর পেস্ট পৌঁছে যাচ্ছে দেশ–বিদেশে। গত বুধবার সাংবাদিকদের সেই কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়।
দেশের বাজারে যত টমেটো পাওয়া যায়, তার বড় অংশটি আসে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে। গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দেশের বাজারের ১৫-২০ শতাংশ টমেটোর জোগান দিচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। ধান চাষ লাভজনক নয় বলে এখানকার কৃষকেরা অন্যান্য ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় অনেক শিক্ষিত মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁর মতে, প্রাণের কারখানা স্থানীয় টমেটোচাষিদের স্থিতিশীলতা দিয়েছে।
দেশের বাজারে যত টমেটো পাওয়া যায়, তার বড় অংশটি আসে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে
কারখানা ঘুরে দেখার আগে সাংবাদিকেরা যান ওই এলাকার টমেটো খেতে। সেখানকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রাণের কারখানার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে। কারখানায় যে ধরনের টমেটো প্রয়োজন হয়, সেই ধরনের টমেটো উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকেরা জানান, আগে যে পদ্ধতিতে চাষ হতো, তাতে ফলন হতো কম। মাটিতে পড়ে থাকার কারণে সেই টমেটোতে দাগও পড়ত। প্রাণের নির্দেশিত মাচাপদ্ধতির চাষে ফলন দ্বিগুণ বেড়েছে।
প্রাণ অ্যাগ্রো বিজনেসের উপমহাব্যবস্থাপক সৈয়দ মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের আট সহস্রাধিক চাষির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কী ধরনের টমেটো তাঁদের প্রয়োজন, সেটা কৃষকদের চুক্তির সময়েই জানানো হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় তাঁদের। পাশাপাশি বাজারদরে চাষিদের কাছ থেকে টমেটো কেনা হয়।
চাষিরা জানান, প্রাণের কাছে বিক্রির পাশাপাশি খোলাবাজারেও টমেটো বিক্রি করেন তাঁরা। কারখানা হওয়াতে কী সুবিধা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, এতে বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁরা যেমন কারখানায় সরবরাহ করতে পারছেন, তেমনি বাকিটা বাজারেও বিক্রি করতে পারেন। এতে বাজারে টমেটোর দাম একদম পড়ে যায় না। আগে চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হলে মাঠেই নষ্ট হতো টমেটো, এখন তেমন হচ্ছে না। চাষিরা আরও জানান, টমেটোর মৌসুম শেষ হলে খেতে ঢ্যাঁড়সসহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করা হচ্ছে।
প্রাণের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাণের সস ও কেচাপের বিশ্বব্যাপী চাহিদা আছে। সামগ্রিকভাবে দেশে এসব পণ্যের বার্ষিক বাজার ২৫০ কোটি টাকার, যার বড় একটি অংশ সরবরাহ করছে প্রাণ। প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে এই বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। বছরে ১৮ হাজার টন টমেটো সস উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে প্রাণের।
এই কারখানায় টমেটোর পাশাপাশি আমের মৌসুমে আম ও পেয়ারার মৌসুমে পেয়ারার পাল্প বা মণ্ড তৈরি হচ্ছে। কারখানা পরিদর্শনের সময় উৎপাদনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রাণ অ্যাগ্রো বিজনেস লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. কাওসার আলী।