এক বছরের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ।
করোনার সময়ে সাড়ে ৩১ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ির নিবন্ধন দিয়েছে বিটিআরসি।
জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে অস্থিরতা।
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গাড়ির ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। করোনার প্রকোপ শুরুর প্রথম দিকে কয়েক মাস গাড়ি বেচাকেনা বন্ধ থাকলেও এখন আবার প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবসা এখন বেশ চাঙা। রাজধানীর সড়কে যানজটের চিত্র দেখলে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
করোনাকালে ২০২০, ২০২১ সাল ও চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সারা দেশে ৩১ হাজার ৫৭৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি নেমেছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০–এর বেশি গাড়ির নিবন্ধন দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
করোনার প্রথম বছরে ২০২০ সালে গাড়ির কোনো ব্যবসা হয়নি। এরপর ব্যবসা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার হিসাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে কোনো গাড়ি আমদানি হয়নি। এরপর গত ১৯ মাসে সব মিলিয়ে ২৩ হাজার ২১৮টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। পুরোনো গাড়ির পাশাপাশি নতুন গাড়িও এসেছে এ সময়ে।
বারভিডা সূত্রে জানা গেছে, যত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়, তার প্রায় ৮০ শতাংশই বিক্রি হয়ে যায়। বাকি ২০ শতাংশ শোরুমে থাকে।
দেশে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি—এ দুই ধরনের গাড়ি বিক্রি হয়। তবে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের কাছে রিকন্ডিশন্ড গাড়িই বেশি পছন্দ। বর্তমানে গাড়ির বাজারের ৭৫ শতাংশের মতো দখল করে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি জাপানে এক থেকে পাঁচ বছর চলার পর বাংলাদেশে আসে। নতুনের তুলনায় দামে কম হওয়ায় বাজার দখল করে আছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। তবে কয়েক বছর ধরে পুরোনোর পাশাপাশি নতুন গাড়ির প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের।
গত ছয়-সাত মাস ধরে দেশের বাজারে গাড়ির ব্যবসা বেশ ভালো যাচ্ছে বলে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। গত বাজেটে শুল্ক-কর কমানোর ফলে ব্যবসা ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাড়ি বিক্রেতারা। এ ছাড়া করোনার কারণে লম্বা একটা সময় গাড়ি বেচাকেনা বলতে গেলে বন্ধই ছিল। এ কারণে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় অনেকে এখন গাড়ি বদল করছেন কিংবা নতুন গাড়ি কিনছেন।
রাজধানীর হকস বে অটোমোবাইল লিমিটেড এ দেশে প্রায় ৫০ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে প্রতিষ্ঠানটির শোরুমে পাঁচ-ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ৩০টি করে গাড়ি বিক্রি হয়েছে। আর কুড়িল বিশ্বরোডের ছোট ও মাঝারি শোরুমগুলোতে প্রতি মাসে ৫ থেকে ১০টি গাড়ি বিক্রি হচ্ছে।
বারভিডা সভাপতি আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গাড়ির বিক্রি আবার আগের জায়গায় ফিরে আসছে। করোনার প্রথম বছরে গাড়ি বিক্রি হয়নি। বাজেটে হাইব্রিড গাড়ি ও মাইক্রোবাসের শুল্ক কমানো হয়েছে। যার প্রভাবে বিক্রি বেড়েছে। করোনার কারণে বহু প্রতিষ্ঠান গাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটা বন্ধ রেখেছিল। এখন আবার গাড়ি কেনা শুরু করেছে। সরকারি সংস্থাগুলোও গাড়ি কিনছে। ফলে গাড়ি আমদানি বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ।
সাধারণত জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বেশি আমদানি হয়। টয়োটার এলিয়ন, প্রিমিও, ফিল্ডার মডেলের গাড়িই বেশি আসে। এ ছাড়া হোন্ডাসহ বিভিন্ন কোম্পানির এসইউভি মডেলের গাড়িও আমদানি হয়। ২০২০ সালের প্রথম সাত মাস কোনো গাড়ি আমদানি হয়নি। পরের পাঁচ মাসে ৪ হাজার ৫৪১টি গাড়ি আমদানি হয়। ২০২১ সালে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ৯০৯টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। করোনার আগেও প্রতিবছর ১৬ থেকে ১৭ হাজার গাড়ি আমদানি হতো।
নতুন গাড়িও বেচাকেনা বেড়েছে। হোন্ডা, মিতসুবিশি, হুন্দাই, সুজুকি, টাটা, মাহিন্দ্রাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি এ দেশে বিক্রি হয়। ২০২১ সালে তিন হাজার নতুন গাড়ি বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ পুরোনো গাড়ির পাশাপাশি নতুন গাড়ি বেচাকেনার সঙ্গেও জড়িত। তিনি বলেন, জাপানসহ ইউরোপের যেসব দেশ নতুন গাড়ি তৈরি করে, সেসব দেশে কম্পিউটারাইজড চিপসের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী নতুন গাড়ির সরবরাহ হচ্ছে না। আবার সেসব দেশে নতুন গাড়ির দামও ২ থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি জানান, কোভিডের পর নতুন গাড়ির ব্যবসাও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে দুই মাস ধরে সরবরাহ–সংকটের কারণে ব্যবসা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েক মাস ধরেই জাপানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অকশন কমেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, করোনার কারণে নতুন গাড়ির কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশসংকট দেখা দিয়েছে। ফলে জাপানের ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো নতুন গাড়ি বানানো কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া জাপানের নিজস্ব বাজারেও রিকন্ডশন্ড গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। কারণ, করোনায় দেশটির অনেক মানুষের আয় কমে গেছে। এ কারণে তাঁরা নতুন গাড়ি কেনার পরিবর্তে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির প্রতি ঝুঁকছেন।
এসব কারণে বাংলাদেশের মতো দেশে যেসব রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আসত, সেসব গাড়ির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বিশেষ করে টয়োটা ব্র্যান্ডের প্রিমিও, এলিয়নসহ বিভিন্ন মডেলের গাড়ির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। বারভিডা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একটি জাহাজে মাত্র আড়াই শ গাড়ি এসেছে। আগে ওই ধরনের একটি জাহাজে এক হাজার গাড়ি আনা হতো।