শিল্পে ব্যবহৃত জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) নেতারা।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে সিরামিক খাত প্রায় আমদানি বিকল্প শিল্প খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গ্যাসের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসনির্ভর এই শিল্পের উদ্যোক্তারা বিপাকে।
সিরাজুল ইসলাম মোল্লা আরও বলেন, বিগত ১০ বছরে শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য প্রায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তখনই সিরামিক পণ্যের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
এখন স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবার শিল্প খাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ) প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রায় ১১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় ১৮-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। ফলে বিদেশি সিরামিক পণ্যের বিপরীতে দেশীয় পণ্য বাজার হারাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিরাজুল ইসলাম।
বিসিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘গ্যাস সিরামিক শিল্পের কাঁচামালের অন্যতম প্রধান উপকরণ। সিরামিক পণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ১২ শতাংশ যায় এই গ্যাসের পেছনে। কিন্তু গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তৈরি করা পণ্যের মূল্য ইচ্ছামতো বাড়ানো যায় না। ফলে উৎপাদকেরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।’
বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে আমরা জানতে পেরেছি, গত চার বছরে তিতাস গ্যাস ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। এরপরও লোকসানের দাবি তুলে অবিবেচকের মতো আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আদৌ যুক্তিসংগত নয়।’
ইরফান উদ্দিন আরও বলেন, ‘অতীতে দাম বাড়ানোর সময় তিতাস কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, উন্নত মানের গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা হবে, কিন্তু বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। সঠিক চাপ ও মান ঠিক রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা তিতাসের নেই। এর মধ্যে আবার দাম বাড়ানো “মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা”র মতো।’
দেশে এখন ৭০টি সিরামিক কারখানা (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার) আছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আছে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই খাত প্রতিবছর রপ্তানি করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য এবং সরকারকে রাজস্ব দেয় প্রায় ৩ হাজার কোটি আর গ্যাস বিল দেয় প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, গ্যাসের দাম বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তো হবেই না, উল্টো শ্রমিক ছাঁটাই করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএমইএর উপদেষ্টা কুতুবুদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহসভাপতি মইনুল ইসলাম, পরিচালক রাশেদ মাইমুনুল ইসলাম ও আবদুল হাকিম।