শিক্ষা–স্বাস্থ্যেও অসামান্য অবদান

খেলাধুলা মানেই যেন ইস্পাহানি

চট্টগ্রামের জাকির হোেসন সড়কে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
চট্টগ্রামের জাকির হোেসন সড়কে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ব্যবসার মতো ইস্পাহানির সামাজিক কার্যক্রমের ইতিহাসও পুরোনো। বিশ্বে ‘করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ প্রচলনের আগেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়াসহ বহু খাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে পরিবারটি।

কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে ব্যবসা সম্প্রসারণের পর শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ইস্পাহানি পরিবার। চট্টগ্রামে থিতু হওয়ার পরই শুরু হয় সামাজিক কার্যক্রম। ষাটের দশকে চোখের চিকিৎসা ছিল এ অঞ্চলে বেশ দুর্লভ। আর তাই ১৯৬০ সালে ২৯ জুলাই ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল গড়ে তোলেন এম এ ইস্পাহানি। মুনাফার জন্য নয়, এমন ধারণা নিয়ে ৬১ বছর ধরে চোখের চিকিৎসায় সব ধরনের সেবা দিচ্ছে এই হাসপাতাল। জামালপুর, নওগাঁ ও বরিশালেও শাখা আছে এই হাসপাতালের। এসব হাসপাতাল থেকে বছরে অন্তত ১০ লাখ রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। অস্ত্রোপচার হচ্ছে বছরে ৫০ হাজারের মতো রোগীর। কোনো আর্থিক সংগতি না থাকলেও বিনা মূল্যে সেবা দেয় হাসপাতালটি। সিলেটের কুলাউড়া চা-বাগানের পাশে নতুন হাসপাতাল গড়ে তুলছে ইস্পাহানি।

বাংলাদেশে শিক্ষায় ইস্পাহানির অবদান অনেক বেশি। ইস্পাহানি নামে যত স্কুল-কলেজ রয়েছে, সব ইস্পাহানির পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। চট্টগ্রামে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকায় ইস্পাহানি গার্লস স্কুলসহ আটটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে ইস্পাহানি পরিবার। নিজেদের প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে গ্রুপটি। ১৯৮৭ সালে শ্রমিকদের সন্তানদের বিনা বেতনে পড়ানোর জন্য পাহাড়তলীতে মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ইস্পাহানি পরিবার। কুমিল্লা সেনানিবাসে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজের ভবন গড়ে উঠেছে ইস্পাহানি পরিবারের বদান্যতায়।

খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইস্পাহানি। মির্জা সালমান ইস্পাহানির দাদা গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে কলকাতায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের চেয়ারম্যান ছিলেন। সুদীর্ঘকাল ধরে ব্যাডমিন্টন থেকে শুরু করে এমন কোনো খেলা নেই যেখানে ইস্পাহানি পৃষ্ঠপোষকতা করেনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে ইস্পাহানি দীর্ঘ সময় ধরে সহযোগী হয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে ২০০১ সাল থেকে টানা ৯ বছর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইস্পাহানি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটসহ স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা করেছে তারা। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমি থেকেও প্রতিবছর বের হচ্ছে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। চট্টগ্রাম ইস্পাহানি পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে গ্রুপটি। আবার ভাটিয়ারি গলফ ক্লাবে ১৯৮৯ সালে প্রথম স্পনসর টুর্নামেন্ট ছিল ইস্পাহানি কাপ গলফ টুর্নামেন্ট। বর্তমানে ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানি ভাটিয়ারি গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের সহসভাপতি (গলফ উইং)। স্কোয়াশ ফেডারেশনেরও সহসভাপতি হিসেবে আছেন। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

খেলাধুলা মিশে আছে ইস্পাহানির পরিবারের রক্তেও। ইস্পাহানির বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানি এখনো স্টেডিয়ামে গিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করেন। প্রিয় শখ গলফ খেলা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে গলফ খেলছেন। বহুবার তিনি এবং তাঁর সহধর্মিণী গলফ ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। সময় পেলে এখনো ছুটে যান দেশের নানা গলফ ক্লাবে।