ছয় মাস পিছিয়ে নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। তাতে আগের পরিকল্পনার চেয়ে কর্মসংস্থান কমিয়ে ধরা হচ্ছে।
কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা কমছে।
৫ বছরে কর্মসংস্থান হবে ১ কোটি ১৩ লাখ।
দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে ১৫.৬ শতাংশে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি উন্নীত হবে ৮.৫১ শতাংশে।
আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায় সরকার। এর মধ্যে ৮১ লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে দেশের ভেতরে। বাকি ৩২ লাখ মানুষ যাবে দেশের বাইরে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
আগামী ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জন্য এ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। যেটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উত্থাপন করবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। জুনের আগে এটি অনুমোদনের কথা থাকলেও করোনার কারণে সব পরিকল্পনা উলটপালট হয়ে যায়। তাই করোনার পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে এ পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর অনুমোদন পেলেও পাঁচশালা পরিকল্পনার সময়কাল শুরু হবে গত ১ জুলাই থেকে।
এদিকে, গত জুনে শেষ হওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৫-২০২০) সরকার ১ কোটি ২৯ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। সেই হিসাবে, নতুন পরিকল্পনায় আগেরবারের চেয়ে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হচ্ছে ১৬ লাখ।
দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্থবির থাকলেও সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে বিনিয়োগকে মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ উন্নীত করা হবে ২৮ শতাংশে, বর্তমানে যেটি সাড়ে ২৪ শতাংশে রয়েছে। আর সরকারি খাতের বিনিয়োগ ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে জিইডির যে মূল্যায়ন করেছে সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুত ১ কোটি ২৯ লাখের বিপরীতে ৯৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছে সরকার। প্রতিশ্রুতির চেয়ে ৩৪ লাখ কম কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ বছরে। উল্লিখিত সময়ে যেসব কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৬০ লাখ ও বাকি ৩৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে জীবিকার সন্ধানে গেছেন।
আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার কর্মসংস্থানের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছরগুলোতে বেশির ভাগ কর্মসংস্থান হবে উৎপাদন ও সেবা খাতে। তা ছাড়া দেশের বাইরেও মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এর মধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হবে খুব কম সময়ের মধ্যে। সেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এমন এক সময়ে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, যে সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার কথা রয়েছে। আবার করোনা মহামারির মধ্যেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। একই সময়ে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নেরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বলতে গেলে এখন স্থবির। বাংলাদেশেও রাজস্ব আদায়, রপ্তানিসহ অর্থনীতির সূচকগুলো এলোমেলো।
জিইডির তথ্য বলছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। সেটি ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালের মধ্যে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে নতুন পাঁচশালা পরিকল্পনায়। সরকার আশা করছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ অর্জিত হলেও চলতি অর্থবছর শেষে তা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতির অবস্থা উন্নতি ঘটবে। এরপর প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ৮.২২ থেকে ৮.৫১ শতাংশে উন্নীত হবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের হার মোট জিডিপির ১৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে। যেটি বর্তমানে জিডিপির ১০ শতাংশের ঘরে রয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সকলের সাথে সমৃদ্ধির পথে’।
দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্থবির থাকলেও সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে বিনিয়োগকে মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ উন্নীত করা হবে ২৮ শতাংশে, বর্তমানে যেটি সাড়ে ২৪ শতাংশে রয়েছে। আর সরকারি খাতের বিনিয়োগ ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা । দেশে এখন মোট সরকারি–বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির সাড়ে ৩১ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটি হলো জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও বিনিয়োগ, রপ্তানি, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও প্রবাসী আয়ের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও ছিল না। এমনটা হতে পারে, হয়তো তথ্যের বিভ্রাট হয়েছে। অথবা প্রাক্কলনে গন্ডগোল আছে। নতুবা অর্থনীতিতে এমন কিছু ঘটেছে, যেটা আমাদের অজানা। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন খাতে এই কর্মসংস্থান হবে, কোন ধরনের কর্মসংস্থান হবে, প্রতিবছর কী পরিমাণ হবে, এসব কিছু বিস্তারিত নেই।