করোনায় চাঙা ফ্ল্যাটের ব্যবসা

গত ছয় মাসে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যবসা করেছে, তা ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি।

প্রত্যেক মানুষই মাথা গোঁজার একটি ঠিকানা চায়। মৌলিক এই চাহিদার কারণে রাজধানীর বুকে একের পর এক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। পাখির চোখে রাজধানী ঢাকার আবাসনের এই খণ্ডচিত্র সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তুলেছেন

করোনার শুরুর দিকের সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আবাসন খাত। কেনার জন্য ফ্ল্যাটের খোঁজখবর করছেন এখন ক্রেতারা। বিক্রির গ্রাফও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। গত বছরের শেষ ছয় মাসে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যবসা করেছে, তা ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত বছর ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় কিছুটা কমানো হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আবাসন খাতে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দেয় সরকার। ব্যাংকঋণের সুদের হারও কমেছে। প্রবাসীরাও বিনিয়োগ করছেন। সব মিলিয়ে তাই ফ্ল্যাট বিক্রি বেড়েছে। প্লটের বিক্রিও মন্দ নয়।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তারপর মার্চের শেষ দিকে সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারি করা হয়। তাতে আবাসন ব্যবসায় ভয়াবহ ধস নামে। তখন বিক্রি তো দূরে, গ্রাহকের কাছ থেকে কিস্তির টাকাও পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সঙ্গে প্রকল্পের নির্মাণকাজও বন্ধ হয়ে যায়। মে মাসে সীমিত আকারে ব্যবসা খুললেও খুব কম ক্রেতার দেখা পায় প্রতিষ্ঠানগুলো। জুন থেকে একটু একটু করে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।

আবাসন খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং ফর ফিউচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরুল হক প্রবাল প্রথম আলোকে বলেন, আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা না থাকলে ব্যবসা আরও ভালো হতো। তিনি বলেন, ‘রডের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সিমেন্টের দামও বাড়ছে। ফলে আমরা কিছুটা ভয়ের মধ্যে আছি।’

২০১২ সালে আবাসন খাতে মন্দা শুরু হয়। পরের বছর টানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সে সময় ফ্ল্যাটের দাম কমিয়েও ক্রেতা খুঁজে পায়নি অনেক প্রতিষ্ঠান। কিস্তি দিতে না পারায় অনেকের বুকিংও বাতিল হয়ে যায়। সেই অস্থির সময় পার করে ২০১৬ সালের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও সংকট কাটেনি। তবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণের ঘোষণা আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্ল্যাট নিবন্ধনে আগে ৪ শতাংশ গেইন ট্যাক্স, ৩ শতাংশ স্ট্যাম্প ফি, ২ শতাংশ নিবন্ধন ফি, ২ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর ও ৩ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হতো। গত বছর স্ট্যাম্প ফি কমিয়ে দেড় শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর দেড় শতাংশ এবং ১ হাজার ৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ভ্যাট ২ শতাংশ করা হয়েছে। ফ্ল্যাট কিনে কালোটাকা সাদা করতে চাইলে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশার বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা এবং ধানমন্ডি, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হাউজিং সোসাইটি (ডিওএইচএস), মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, নিকুঞ্জ, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও চট্টগ্রামের খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদে প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কর দিতে হবে। এসব এলাকার বাইরে যেকোনো সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গমিটারে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা কর দিতে হবে।

গত ছয় মাসে আবাসন খাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানালেন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ছয় মাসে আবাসন খাতে ক্রেতাদের ভালো আগ্রহ দেখা গেছে। আশা করছি, আগামী ছয় মাস ভালো যাবে।’ সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো বজায় থাকলে আগামী অর্থবছরে ব্যবসা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।