সাক্ষাৎকার

এসির বাজারের ৭০ শতাংশ দখল করতে চাই আমরা

এসির বাজারের ৩৫ শতাংশ ওয়ালটনের দখলে। এসির বাজার ও আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা জানান, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুর রহমান।

গোলাম মুর্শেদ
গোলাম মুর্শেদ
প্রশ্ন

প্রথম আলো: ওয়ালটনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বাজারে আসার গল্পটা শুনতে চাই।

গোলাম মুর্শেদ: ইলেকট্রনিক শিল্প সম্ভাবনাময় হলেও একসময় খাতটি ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। দেশের টাকা বিদেশে চলে যেত। দেশের টাকা দেশে রাখার চিন্তা থেকে ২০০৭ সালে ওয়ালটন প্রতিষ্ঠিত হয়। গাজীপুরের চন্দ্রায় টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ও এসি দিয়ে ওয়ালটনের যাত্রা শুরু। নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে কোম্পানিটি আজকের অবস্থানে এসেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই তিনটি পণ্য রপ্তানিও করছি আমরা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এসির বাজারের বড় একটি অংশ ওয়ালটনের দখলে। আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

গোলাম মুর্শেদ: এসির বাজারে আমরা শুরু থেকেই ভালো ছিলাম। এখন এসির বাজারের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ওয়ালটনের দখলে। পুরো গরমের সময় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শেয়ার থাকে ওয়ালটনের। অন্য সময় থাকে ৩৫ শতাংশে। আমরা মানসম্মত পণ্য দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকতে চাই। ফ্রিজের বাজারে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ দখল করে আছে ওয়ালটন। ফ্রিজের মতো এসিও বিলাসী পণ্য নয়। দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে পণ্যটি। টিনশেড ঘরে থাকা পরিবারও এখন তার সংসারে এসি চায়, আমাদের কাছে এমন গ্রাহকও আসেন। ফ্যানের চিন্তা কমে যাচ্ছে। ফ্রিজের মতো আমরা আগামী ৫ বছরের মধ্যে এসির বাজার ৭০ শতাংশ দখল করতে চাই আমরা। সে পরিকল্পনা ধরেই আমরা এগোচ্ছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ওয়ালটনের এসির বিশেষত্ব কী। মানের দিক থেকে এসির অবস্থান কোথায়?

গোলাম মুর্শেদ: আমরা জোরগলায় বলতে চাই, ওয়ালটনের যে প্রযুক্তি আর উদ্ভাবন রয়েছে, সেটি দেশে কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। আমাদের কারখানায় ২০০ প্রকৌশলী উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করেন। একটি মডেল আমরা ছয় মাসের বেশি রাখি না। বদলে ফেলি। অন্যরা একটি মডেল এক থেকে দেড় বছর বাজারে রাখে। ওয়ালটনের এসির মডেলের সঙ্গে অন্য কোম্পানির এসির মডেল দেখলেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। আমাদের এসি বানাতে কারও অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ওয়ালটন তাদের এসি কোন কোন দেশে রপ্তানি করছে? বিদেশে এসির সম্ভাবনা কেমন?

গোলাম মুর্শেদ: বর্তমানে আমাদের তৈরি এসি ৪০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে পণ্যটি। পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারেও যাচ্ছে এসি। আমাদের কারখানা গাজীপুরের চন্দ্রায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে যেতে সময়ের অনেক অপচয় হয়; খরচও বাড়ে। এ কারণে আমরা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে কারখানা করতে চাই। এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে। সরকারের কাছ থেকে জমি পেলে সেখানে আমরা এসি, টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করব। তখন রপ্তানি আরও সহজ হবে। তা ছাড়া বিদেশের মাটিতেও আমাদের কারখানা করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ব ইউরোপ হবে আমাদের প্রথম টার্গেট। সেখানে এসি, টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটরের প্রচুর চাহিদা আছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ওয়ালটন নতুন কী প্রযুক্তির এসি আনছে?

গোলাম মুর্শেদ: বাজারে আমরা ভয়েস কন্ট্রোল নিয়ে এসেছি। আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ভয়েস কন্ট্রোল চালু করেছি। আমরা ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি এনেছি যা বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী। এই প্রযুক্তির একটি এক টনের এসি ব্যবহারে ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ হয় মাত্র ২ টাকা ১৯ পয়সার। তাতে মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৬০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: প্রায় সময় এসির বিস্ফোরণের খবর শোনা যায়। কেন এসির বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে?

গোলাম মুর্শেদ: এটা নির্ভর করে ব্যবহারের ওপর। আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব এসি বিস্ফোরিত হয়, সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিসিং করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় পরপর সার্ভিস করাতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটে বিদ্যুৎ–সংযোগের কারণে। লোড ক্যাপাসিটির কারণে। এখানে ব্র্যান্ডের দোষ নয়, ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকা জরুরি।