করোনার ধাক্কা কাটিয়ে মোটরসাইকেল খাত ঘুরে দাঁড়ালেও খাতটি এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। মোটরসাইকেল খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায় । সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার।
প্রথম আলো: করোনার পর মোটরসাইকেলের ব্যবসা কতটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে? চলতি বছর ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার–সংকটসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের কী প্রভাব পড়ছে এ খাতে?
বিপ্লব কুমার রায়: মহামারির শুরুর দিকে ব্যবসা একেবারে থেমে গিয়েছিল। পরে বেচাবিক্রিতে গতি এসেছিল। শেষ পর্যন্ত ওই বছর বাজার স্থিতিশীল ছিল বলা যায়। ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর মোটরসাইকেলের বিক্রি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলতি বছর ব্যবসা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেল উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার–সংকট। সে জন্যও খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে সব কোম্পানিই চাপে পড়ে গেছে। শুরুর দিকে সব কোম্পানি মুনাফা কমিয়ে খরচ সমন্বয়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়। তাই সবাই ধীরে ধীরে দাম বাড়ানো শুরু করেছে।
প্রথম আলো: আপনাদের কোম্পানির মোটরসাইকেল উৎপাদন পরিস্থিতি কী?
বিপ্লব কুমার রায়: ২০১৮ সাল থেকে আমরা বাংলাদেশে টিভিএস মোটরসাইকেল উৎপাদন করছি। মিরপুরে তাবানি বেভারেজের কারখানা ইজারা নিয়ে সেখানে দুই চাকার যান তৈরি করছি। দুই পালায় (শিফট) দিনে আমাদের মোটরসাইকেল উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় এক হাজার। তবে মাসে আমরা সারা দেশে গড়ে ১২ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করি। সেই অনুযায়ী, আমরা উৎপাদন করি।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের বাজার বড় হচ্ছে না কেন?
বিপ্লব কুমার রায়: বর্তমানে বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয় দেশে। এটি খুব সহজেই ১০ লাখে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। মূল সমস্যা হচ্ছে, খুচরা পর্যায়ে ঋণ সুবিধা পাওয়া যায় না। কারণ, আমাদের মোটরসাইকেল ক্রেতাদের মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষই বেশি। এ জায়গায় নীতিসহায়তা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে যদি ঋণ দেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের বাজার দ্রুত বাড়ানো সম্ভব।
প্রথম আলো: মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ তৈরিতে দেশে সংযোগশিল্প গড়ে তোলার বিষয়ে আপনাদের কোনো উদ্যোগ কী আছে?
বিপ্লব কুমার রায়: আমি আগেই বলেছি, বর্তমানে আমাদের দেশে বার্ষিক মোটরসাইকেলের চাহিদা সাড়ে পাঁচ লাখ। এই অল্পসংখ্যক চাহিদা দিয়ে যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা লাভজনক হবে না। সব কোম্পানি মিলে এক শর বেশি মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদন করে। একেকটি মডেলের মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশও ভিন্ন ভিন্ন। আমরা বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ব্যাটারি ব্যবহার করছি। সিট (আসন) ও ফিল্টার উৎপাদন করার জন্য ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে কারখানা করতে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে সিট তৈরির কারখানা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে সিট ও ফিল্টারের অংশবিশেষ স্থানীয় কোম্পানিতে উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।