আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। একই সঙ্গে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয়, নির্মাণসামগ্রীর খরচ কমানোসহ আবাসন খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রিহ্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইন্তেখাবুল হামিদ, সহসভাপতি কামাল মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, শরীফ আলী খান, মোহাম্মদ সোহেল রানাসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন পরিচালক।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ বা কালোটাকা সাদা করার ‘বিশেষ’ সুবিধা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সেই সুযোগ বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আগের মতো অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে রিহ্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘রিহ্যাবের বাজেট প্রস্তাবে আমরা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এ দাবি বিবেচনা করা হয়নি।’
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে জমি-ফ্ল্যাট নিবন্ধনে খরচ নেওয়া হয় ১০ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। আমরা নিবন্ধন খরচ ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কারণ, নিবন্ধন ব্যয় কম হলে ক্রেতারা জমির সঠিক মূল্য দেখাতে উৎসাহিত হবেন। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ কমে আসবে। কিন্তু এই দাবিও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।’
আবাসন ঋণের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে “হাউজিং লোন” নামে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন (রিফিন্যান্সিং) তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এই তহবিল গঠনের কোনো প্রতিফলন নেই।’ কোনো দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন রিহ্যাব সভাপতি।
প্রস্তাবিত বাজেটে রডসহ বেশ কিছু নির্মাণসামগ্রীর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে উদ্বেগ জানিয়েছে রিহ্যাব। সংগঠনটির নেতারা বলেন, ‘আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ এমএস রডের দাম গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আমরা চেয়েছিলাম ইস্পাতের কাঁচামালের ওপর শুল্ক–কর কমানো হোক। সেটি না করে উল্টো বিক্রয় পর্যায়ে প্রতি টন বিলেট ও রডের ওপর ২০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। আবার লিফট আমদানিতে শুল্ক-কর ১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের তার, পাইপ, জিআই ফিটিংসসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। হঠাৎ করে এক লাফে এসব নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলে ফ্ল্যাটের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান আবাসন ব্যবসায়ীরা। তাই নির্মাণসামগ্রীর দাম কমাতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।