পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি আজ শুক্রবার দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে গভর্নর তাঁর এক পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কাছে পাঠান। সেখানে তিনি পদত্যাগের জন্য ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করেন। তবে এ বিষয়ে সচিব আবদুর রহমান খান কোনো মন্তব্য করেননি। পরে এ বিষয়ে আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি জানতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। আগামীকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চার বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে তাঁর। সেখানে হয়তো বিষয়টি জানা যেতে পারে।
জানা গেছে, নতুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামীকাল শনিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ও বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এমনকি তিনি তাঁর বাসভবন গভর্নর হাউসেও নেই বলে জানা গেছে।
গভর্নরের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর বা প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে গভর্নর নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেই হিসেবে গভর্নরকে পদত্যাগও করতে হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আব্দুর রউফ তালুকদার তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বুধবার একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তাঁরা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরও চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে ‘পদত্যাগে রাজি’ করান। কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। যেসব শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে সাদা কাগজে সইয়ের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বা যাঁদের পদত্যাগে রাজি করানো হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাঁরা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা।
২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে তিনি যোগ দেন ওই বছরের ১২ জুলাই। গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার জেরে সাংবাদিকেরা গভর্নরের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থতা, ডলার-সংকটসহ নানা কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে রয়েছে। চলতি বছর গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একীভূতকরণের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াও প্রশ্নের মুখে পড়ে।