পেনশন
পেনশন

‘প্রত্যয়’ পেনশনের বাস্তবায়ন এক বছর পেছাল, আন্দোলন থেকে পেছাননি শিক্ষকেরা

সর্বজনীন পেনশনের নতুন স্কিম (কর্মসূচি) ‘প্রত্যয়’-এর বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়ে গেছে। ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় আজ রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে সরকারি কর্মচারীদের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় প্রযোজ্য হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে।

ফলে ২০২৫ সালের ১ জুলাই বা তার পরে সরকারি চাকরিতে যাঁরা নতুন যোগ দেবেন বা স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ইত্যাদি সংস্থায় যাঁরা নতুন যোগ দেবেন, বাধ্যতামূলকভাবে তাঁরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসবেন।

দেশের সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার জন্য ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এবারের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সরকারি চাকরিজীবীদেরও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন আরেকটি কর্মসূচি চালু হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এটির নাম হবে ‘সেবক’।

বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিটিই সরকারি ভাষ্য। সে অনুযায়ী বিষয়টি কার্যকরের সময় এক বছর পেছাল।’

প্রত্যয় চালুর সিদ্ধান্তটিকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর বাস্তবায়নে গত মার্চ থেকেই বিরোধিতা করে আসছিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ফেডারেশন বলছে, এ সিদ্ধান্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর এক নীরব ষড়যন্ত্র এবং প্রত্যয় চালু হলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা কমবে। ১ জুলাই থেকে তাই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা। দুই সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ সব বন্ধ।

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচি নিয়ে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা। বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই। ইতিপূর্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে পেনশনে যোগদানের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। সবার মতো তাঁরাও ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ে যোগ দেবেন, এটা তাঁদের পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে।

পেনশন কর্তৃপক্ষের বরাতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২ জুলাই আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) সব রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও সরকারি ব্যাংক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআইসহ ৪০৩ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য প্রত্যয় প্রযোজ্য। এ–ও জানানো হয়েছিল, ৪০৩টির মধ্যে ৯০টি প্রতিষ্ঠানে শুধু পেনশন–ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়। এগুলো হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা।

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে গতকালের বৈঠকের পর আজ রোববার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে। বৈঠকের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দাবি পূরণ হয়নি, তাই আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। তবে গতকালের বৈঠকে আমাদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তাই আশা করছি, আমাদের দাবি পূরণ হবে।’

শুধু সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাতিল নয়, মোট তিন দফা দাবি আদায়ের লড়াই করছেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বাকি দুটি হচ্ছে সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো।