দেশে এখন আমনের ভরা মৌসুম। এর মধ্যেই পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে খুচরা পর্যায়ে সরু চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। চালকলমালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তাঁরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। গতকাল সোমবার দেশের তিনটি জেলার বড় পাইকারি মোকাম এবং রাজধানীর তিনটি বাজারে খোঁজ নিয়ে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে অনেক দিন ধরেই গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। টানা আট মাস দেশে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। বর্তমানে শাকসবজির দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম এখনো বেশি। এক সপ্তাহ আগে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা করে বেড়েছে; আলু-পেঁয়াজের দামও চড়া। এরই মধ্যে বাড়ল চালের দাম।
ধানের দাম গত এক-দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিক কারণেই চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখানে আমরা নিরুপায়।ফরহাদ চকদার, সাধারণ সম্পাদক, নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপ
ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল এবং কারওয়ান বাজার ঘুরে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। তাতে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা। তবে কোথাও কোথাও বস্তাপ্রতি দাম ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে শোনা যায়।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের দাম। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ঢাকার তিন বাজারে খুচরা পর্যায়ে কোম্পানি ও মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সপ্তাহ দুই আগে ছিল ৭২-৮০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়েছে। এ ছাড়া মোজাম্মেল, রসিদ, মঞ্জুর, সাগর, ডায়মন্ডসহ সব কোম্পানির চালের দামই বেড়েছে।
সরু চালের পাশাপাশি মাঝারি ও মোটা চালের দামও প্রতি কেজি ২-৩ টাকা বেড়েছে। যেমন মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চালের কেজি এখন ৬০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ৫৮ টাকা ছিল। মানভেদে মোটা স্বর্ণা চাল বর্তমানে ৫২-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৫০-৫৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া সুগন্ধি তথা বাসমতী চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল বিক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চালের দাম বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বেচাকেনা কিছুটা কমেছে। অনেক ক্রেতা বাড়তি দাম শুনে কম পরিমাণে চাল কিনছেন।’ পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা এই বিক্রেতার।
যে কারণে বেড়েছে দাম
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বিক্রির বড় মোকাম তথা চালকল পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারের চালের আড়ত খাদ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী গোলাম রব্বানী জানান, গত দুই সপ্তাহে সেখানে মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের অন্য দুই বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর ও নওগাঁয় মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও সুফিয়া চালকলের মালিক ফরহাদ চকদার বলেন, ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ধানের দাম গত এক-দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিক কারণেই চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখানে আমরা নিরুপায়।’
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া এবং নওগাঁ ও দিনাজপুর প্রতিনিধি।)