ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (মাঝে) বক্তব্য রাখছেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (মাঝে) বক্তব্য রাখছেন।

অনলাইনে ভূমিকর আদায়ে বিপ্লব, চালুর এক মাসেই আয় ৩২৬ কোটি টাকা: ভূমিমন্ত্রী

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, গত এপ্রিলের ১৪ তারিখ থেকে ভূমিকর সম্পূর্ণভাবে অনলাইন মাধ্যমে আদায় শুরু হয়েছে। এরপর মাত্র এক মাসে কর আদায় হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। অথচ আগে পুরো অর্থবছরে ৮০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ভূমিকর আদায় হতো। অনলাইনে ভূমিকর আদায়ের ব্যবস্থা চালু করার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে ভূমিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। সম্পদ কর আহরণের সুযোগ বিষয়ে সিপিডির ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ ছাড়া পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী বলেন, সনাতনী পদ্ধতির তুলনায় অনলাইনে ভূমিকর আদায়ে একধরনের বিপ্লব হয়ে গেছে। তিনি জানান, ২০১৯–২০ সাল পর্যন্ত পুরোপুরি সনাতনী বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভূমিকর আদায় করা হতো। ওই বছর ৬২১ কোটি টাকা ভূমিকর আদায় হয়েছিল। ২০২০–২১ সালে ম্যানুয়ালের পাশাপাশি অনলাইনেও কর আদায় হয়। সেবার মিশ্র উপায়ে ৭৯১ কোটি টাকা ভূমিকর আদায় হয়।

আর এ বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শতভাগ অনলাইনে ভূমিকর আদায় শুরু হয়েছে। এরপর মাত্র এক মাসে ভূমিকর আদায় হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। এভাবে আদায় হলে এক অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভূমিকর আদায় করা সম্ভব বলে জানান সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

ব্যক্তির মালিকানায় থাকা সব জমি দেখা যাবে অনলাইনে

অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সুবিধাবাদীরা সব সময় গ্রে এরিয়াতে হাঁটতে চায়। সরকার ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমিতে খাজনা বা কর ছাড়ের সুযোগ রেখেছে। তবে অনেকে এ সুবিধা নিতে অকৃষি জমিকে কৃষিজমি হিসেবে দেখাচ্ছে। কিংবা বিভিন্ন স্থানে থাকা কৃষিজমিকে আলাদাভাবে দেখাচ্ছে। এ জন্য আমরা নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করেছি, যার নাম—সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ বা সিএলও।’

সিএলওর অধীনে একটি তথ্যভান্ডার করে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। এর ফলে একজন ব্যক্তির নামে সারা দেশে যত জমি রয়েছে, তা ওই তথ্যভান্ডারে চলে আসবে। যে কেউ এটা দেখতে পারবে। ফলে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে।

আদায় হচ্ছে না ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ কর

অনুষ্ঠানে সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশের জিডিপি যদি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সম্পদ কর বাড়ার কথা। সেই হিসাবে জিডিপির ১২ শতাংশ (নামিকভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি) প্রবৃদ্ধি হলে বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার বাড়তি সম্পদ কর আসার কথা ছিল। এটা তো আমরা পাইনি। বাংলাদেশে সম্পদ কর আদায়ের হার আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয় হয়ে গেছে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, দেশের কর–জিডিপির অনুপাত অনেক কম। এই হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্পদ কর ভূমিকা রাখতে পারে। কার্যকরভাবে সম্পদের কর আদায় করা গেলে অর্থনীতিতে শুভ চক্র দেখতে পাব।

বিভিন্ন দেশে সম্পদ কর আহরণের উদাহরণ টেনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্যান্য দেশে জিডিপির অনুপাতে সম্পদ কর আদায়ের হার ১০ শতাংশের বেশি। অথচ বাংলাদেশে এই হার দশমিক ৫ শতাংশও না। যে দেশে মাথাপিছু আয় যত বাড়ে, সেখানে তত সম্পদ কর আদায় বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা হচ্ছে না।

নীতি বাস্তবায়নে বাধা দুর্নীতিবাজদের ত্রয়ী

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সরকার অনেক সহজ নীতি নিচ্ছে, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ, এখানে দুর্নীতিবাজদের একটা ত্রয়ী কাজ করছে। এটা রাষ্ট্রের একটা বড় সমস্যা। দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজ আমলা—এই ত্রয়ী সেই ধরনের নীতি নেয়, সেখানেই বিনিয়োগ করে, যেখানে দুর্নীতির সুযোগ আছে।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, যে দেশে ব্যাংক লুট হয়, অর্থ পাচার হয় এবং এর মাধ্যমে বিদেশে বিপুল সম্পত্তি কেনা হয়, সে দেশে মানুষ কর দিতে নিরুৎসাহিত হবে এটাই স্বাভাবিক।

খতিয়ান ও জমি নিবন্ধনে ঘুষের লেনদেন হয় উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এগুলো বন্ধ করলে কর প্রদানের হার এমনিতে বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রে যখন সুশাসন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র থাকে তখন জনগণও বেশি করে কর দেয়। অন্যদিকে সুশাসন যদি না পায়, সেবা যদি না পায়, তাহলে মানুষ কর দিতে উৎসাহী হবে না।