বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা–বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল ময়মনসিংহে এক মতবিনিময় সভা হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা–বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল ময়মনসিংহে এক মতবিনিময় সভা হয়।

বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবি ব্যবসায়ীদের

ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানি হলেও তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানান। তাঁরা বলেন, এলসি খুলেও পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ব্যাংকঋণ নিয়েও সমস্যায় আছেন অনেক ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা–বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ কথা বলেন। তবে সভায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কথা জানিয়ে এসবের সমাধান দাবি করেন। তাঁরা বলেন, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ভারতের গুয়াহাটির বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন গতকাল শনিবার জেলা পরিষদের ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে। সভায় ভারতের ৪০ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার ব্যবসায়ী নেতা, হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর, জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর ও শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক সায়েম বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সব সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে বন্ধক দিয়ে এখন নিঃস্ব। একদিকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা নিঃস্ব হচ্ছেন। তিনি দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা সম্প্রসারণে দেশের পক্ষ থেকে যা করণীয়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আগে প্রধান পণ্য হিসেবে ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানি হতো। কিন্তু ভারতীয় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কয়লা আর বাংলাদেশে বেশি করারোপ করায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। স্থলবন্দরগুলোয় পণ্য নিয়ে গাড়ি আটকে থাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যায়, ভারতীয় সীমান্তে স্কেল না থাকায় বাংলাদেশে পণ্যের ওজন নিয়ে জটিলতা হয় এবং এ জন্য ব্যবসায়ীদের জরিমানা দিতে হয়।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুর হক বলেন, চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধানসহ বন্দর ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হলে মানুষ উপকৃত হবে এবং দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা বাড়বে। এতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।

ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম বলেন, ‘ময়মনসিংহ থেকে ভারত সীমান্ত কাছে থাকলেও যশোর দিয়ে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করতে হয়। আমাদের বন্দরগুলো কার্যকর করা গেলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সুলভ মূল্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন।’

ভারতের সফররত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সমন্বয়ক আবদুর রশিদ তাঁর দেশ থেকে বাংলাদেশে গরু, কাঁঠাল, সবজি ও মসলাজাতীয় পণ্য রপ্তানির আগ্রহ দেখান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ১৫টি পোর্ট দেখেছি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সীমান্তের পোর্টগুলো খুবই দুর্বল। এ অঞ্চলের পোর্টগুলোয় সুবিধা বাড়ালে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।’

হালুয়াঘাটের কড়ইতলী আমদানি–রপ্তানি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এম সুরুজ মিয়া বলেন, ‘এ অঞ্চলে চারটি স্থলবন্দর থাকলেও ব্যবসার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। ময়মনসিংহের ব্যবসায়ীরা ঠকছেন। আমরা গারো হিলসের কয়লা ও পাথর আমদানি করতে পারছি না।’ তিনি ভারত থেকে আবার কয়লা ও পাথর আমদানির সুযোগ দাবি করেন। পাশাপাশি দেশ থেকে ভারতে প্লাস্টিক পণ্য ও মাছ রপ্তানি ওপর জোর দেন।  

ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে কয়লা ও পাথর রপ্তানি বন্ধ থাকায় তাঁরা এখন ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি করছেন। এতে তাঁদের খরচ বেশি পড়ে।

শেরপুর চেম্বারের পরিচালক কানু চন্দ জানান, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানির জন্য কয়েক বছর আগে এলসি করে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো তাঁরা পণ্য না পেয়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছেন।

হালুয়াঘাটের পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞা বলেন, চাহিদা থাকলেও অনেক পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা যায় না। এ জন্য চোরাচালান হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গুয়াহাটির বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ট্রেড অ্যান্ড প্রটোকল অফিসার আজহারুল আলম, ভারতের তুরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইনসিম মারাক, গোবরাকুড়া এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক সরকার, করিমগঞ্জ ইমপোর্ট অ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী, নাকুগাঁও এক্সপোর্ট–ইমপোর্টের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান, গুয়াহাটির ব্যবসায়ী দীপঙ্কর শর্মা, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, গারো হিলস এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট সমিতির নেতা আঁখি সাংমা প্রমুখ।