আগামী অর্থবছরের বাজেটের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় আয়কর রিটার্ন জমায় ন্যূনতম ২০০০ টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান বাতিল হচ্ছে। অর্থবিল পাস হওয়ার সময় অর্থমন্ত্রী ন্যূনতম করের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন বলে জানা গেছে।
এবার বাজেট ঘোষণার সময় রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আছে এমন করদাতার জন্য করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। রিটার্ন জমার রসিদ দিয়ে সেবা নিতে হয়, এমন রিটার্ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর পরিশোধের কথা বলা হয়। বাজেট পেশের পর এই প্রস্তাবের ব্যাপারে সাধারণ করদাতার পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমালোচনা করেন।
ঈদের ছুটির আগেই জাতীয় সংসদে আগামী সপ্তাহে বাজেট পাস হবে। তার আগে পাস হবে ২০২৩ সালের অর্থবিল। অর্থবিলে শুল্ক-করসংক্রান্ত পরিবর্তনগুলোর প্রস্তাব থাকে। অর্থবিল পাসের আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে পারেন বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতিমধ্যে ন্যূনতম কর প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সাধারণ করদাতাদের স্বস্তি দিতে এই কর প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী কর আরোপের প্রস্তাব করে বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। এ ধরনের অংশীদারত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাদের ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেন।
ন্যূনতম কর প্রত্যাহার করা হলেও আগামী ১ জুলাই থেকে সব মিলিয়ে ৪৩টি সরকারি–বেসরকারি সেবা নিতে আগের মতো রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। বর্তমানে ৩৮টি সেবা পেতে রিটার্ন জমার রসিদ লাগে। নতুন আয়কর আইনে নতুন করে পাঁচটি সেবা যোগ করা হয়েছে।
নতুন যোগ করা পাঁচটি সেবা হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের; নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণকালে ওই পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর; ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও চালু রাখতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে বা বহাল রাখতে; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে এমন গঠিত কর্তৃপক্ষ বা অন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিলকালে।
এ ছাড়া আগেই যে ৩৮ সেবার জন্য রিটার্ন জমার রসিদ দিতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন; পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে; ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; ব্যবসায় সমিতির সদস্য হলে; কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলে; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ হলে; ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের ক্ষেত্রে; সিটি করপোরেশন এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সরকারি পরিষেবার সংযোগ নিতে হলে; ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত থাকলে এবং সরকারি কর্মচারীদের ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল বেতন হলে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সব মিলিয়ে ৩১ লাখের মতো করদাতা বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শুধু রিটার্ন জমা দিয়েছেন, করযোগ্য আয় না থাকায় কোনো কর দিতে হয়নি।