দেশের খাদ্যপণ্য উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপ চিনি রপ্তানি করতে চায়। তিন বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিটি গ্রুপকে পরিশোধিত চিনি রপ্তানির সুযোগ দিলেও প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে তা রপ্তানি করতে পারেনি। তবে সিটি গ্রুপ এখন সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চায়। এ জন্য আগের অনুমোদনের সময়সীমা ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির আবেদন করেছে সিটি গ্রুপ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে ১০ অক্টোবর এ ব্যাপারে আবেদন করেছেন সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান।
যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবেদন এসেছে। তবে আপাতত চিনি রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার কথা আমরা ভাবছি না।’
আবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে সিটি গ্রুপকে শর্তসাপেক্ষে ৪৭ হাজার ৩০০ টন পরিশোধিত চিনি রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কোভিড পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। সম্প্রতি এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে চিনি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আবেদনপত্রে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের সক্ষমতার কথাও জানানো হয় বাণিজ্যসচিবকে। বলা হয় সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা তিন হাজার টন। প্রতিষ্ঠানটি অপরিশোধিত চিনি আমদানির পর নিজস্ব কারখানায় তা পরিশোধন করে আসছে। সিটি গ্রুপ মনে করে, দেশের বাজারে সরবরাহ অব্যাহত রাখার পর চিনি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
ফজলুর রহমান তাঁর আবেদনপত্রে আরও জানান, বর্তমানে চিনি রপ্তানির বিষয়টি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। রপ্তানি কার্যক্রম চলমান রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রপ্তানির অনুমতি ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো দরকার।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে ডলার-সংকট চলছে, তা কিছুটা লাঘব হবে যদি চিনি রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের পরিশোধন করা চিনি বড় পরিমাণে নয়, বরং প্যাকেট আকারে বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি।
চিনি রপ্তানির জন্য সিটি গ্রুপ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথম আবেদন করেছিল ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট। আবেদনপত্র আমলে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিটি গ্রুপের চিনি রপ্তানির পক্ষে সায় দেয়। এরপর আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে চিনি রপ্তানির অনুমোদন দেয় সিটি গ্রুপকে।
তবে তিনটি শর্তও দেওয়া হয়। শর্তগুলো হচ্ছে রপ্তানি নীতি অনুসরণ করা, চিনি জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা এবং ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে রপ্তানি করা। সে হিসাবে সময়সীমা পার হয়ে গেছে দুই বছর চার মাস আগে।
দেশে চিনি পরিশোধন কারখানা রয়েছে ৫টি। এগুলো পরিচালনা করে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও এস আলম গ্রুপ। আরও কয়েকটি চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানি সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের মতোই চিনি রপ্তানির পক্ষে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি তো পোশাকনির্ভর। ফলে বৈচিত্র্যের বিবেচনায় চিনি একটা ভালো রপ্তানিপণ্য হতে পারে। এখন সরকার ঠিক করতে পারে আগামী নির্বাচনের আগে চিনি রপ্তানির অনুমতি দেবে, না নির্বাচনের পরে।’
গত জুনে ৭টি পণ্যের বিশ্ববাজার ও দেশীয় বাজারের তুলনা করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে উঠে আসে যে বিশ্ববাজারে চিনির দাম এক বছরে ৩৩ শতাংশ বাড়লেও দেশে বাড়ে ৫৮ শতাংশ।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকায় প্রতি কেজি চিনি বেচাকেনা হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। বাজারে অবশ্য চিনি বেচাকেনা হতে দেখা গেছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয় ২২ থেকে ২৪ লাখ টন। এর বাইরে স্থানীয়ভাবে ৩০ হাজার টনের মতো চিনি উৎপাদিত হয়।