বাংলাদেশের যে বিস্কুট পৌঁছে গেছে ৫৩ দেশে

বিস্কুটটির নাম জানার আগেই কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ২০১৬ সালে বিস্কুটটি প্রথম নেপালে রপ্তানি হয়েছিল। এরপরের বাজার ছিল ভারতের আসাম। না, খুব বেশি সাড়া পড়েনি। এরপরই পরীক্ষা–নিরীক্ষা শুরু হয়। বিস্কুটের পুরুত্ব কমিয়ে পাতলা করা হয়। ময়দা ও আলুর সঙ্গে নানা উপাদান মিশিয়ে ক্রিসপি করা হয়। এরপরের গল্প শুধু একের পর এক দেশ জয়ের।

নেপাল ও ভারতের পর বছর ঘুরতেই বাড়তে থাকে দেশের সংখ্যা। এক দেশ, দুই দেশ করে গত অর্থবছর শেষে বিশ্বের ৫৩টি দেশে রপ্তানি হয়েছে এই বিস্কুট। সেই সঙ্গে বেড়েছে রপ্তানি আয়ও। যেমন প্রথম চালানে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১২ হাজার ডলার। গত অর্থবছর শেষে তা পৌঁছে যায় ২ কোটি ডলারে। মিষ্টি, নোনতা, মসলামাখা পাতলা বিস্কুটটির নাম ‘প্রাণ পটাটা স্পাইসি বিস্কুট। রপ্তানিকারক প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ। 

নরসিংদীর ঘোড়াশালে প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে তৈরি হয় এই বিস্কুট। গ্রুপটির আগের শীর্ষ রপ্তানি বিস্কুটের নাম ছিল প্রাণ ফ্রুট ফান। পটাটা রপ্তানি শুরুর প্রথম বছরেই ফ্রুট ফানকে ছাড়িয়ে যায়। শুধু ফ্রুট ফানই নয়, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া বিস্কুট থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসছে পটাটা থেকে।

এই পটাটা কত দেশের মানুষের হাতে পৌঁছেছে, তা জানার আগে বিশ্বে মোট দেশের সংখ্যা জেনে নেওয়া যাক। বিশ্বে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩। পর্যবেক্ষণে থাকা দুটি দেশ ধরা হলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৫। অবশ্য জাতিসংঘের তালিকায় নেই, এমন অনেক অঞ্চলও রয়েছে বিশ্বে। আর পটাটা বিস্কুট পাঁচ মহাদেশের ৫৩টি দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। কোথাও কম, কোথাও বেশি। এসব দেশে ৩০০ কোটির বেশি মানুষের বসবাস।

তবে পটাটা সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানি হওয়া ২২৮ কোটি টাকা বা ২ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পটাটা বিস্কুটের মধ্যে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা বা ৮৯ লাখ ডলারের। এরপরের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, সেনেগাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানের মতো দেশ। আবার ওয়েস্টার্ন সামোয়া, ভানুয়াতু, বুরকিনা ফাসো, পূর্ব তিমুরের মতো কিছুটা অপরিচিত দেশও রয়েছে রপ্তানি গন্তব্যের তালিকায়। এ ছাড়া আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপানের মতো পরিচিত দেশও। 

কীভাবে এত দেশের মানুষের হাতে পৌঁছাল এই বিস্কুট? জানতে চাওয়া হয় প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরীর কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন নতুন পণ্য তৈরি করে কীভাবে নানা দেশের বাজারে ভালোভাবে রপ্তানি করা যায়, প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। তারই অংশ হিসেবে আমরা পটাটা বিস্কুট তৈরি করেছি। বিশ্বের অনেক দেশে এই বিস্কুট রপ্তানি হচ্ছে। এই বিস্কুটের মূল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের দেশে উৎপাদিত আলু।

পটাটাকে কারও কাছে বিস্কুট মনে হলেও, কারও কাছে এটি আবার অনেকটা চিপস। যেমনটি আসামের মানুষেরা প্রথমে এটিকে চিপস হিসেবেই নিয়েছিল। আসলেই তা। বিস্কুট মনে করে মুখে নিলে মিলবে চিপসের স্বাদ। আবার চিপস মনে করে নিলে মনে হবে বিস্কুটের স্বাদ। এ যেন চিপস ও বিস্কুটের সমন্বয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে ১১ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বিস্কুট, ব্রেড, পেস্ট্রি, কেক ও ওয়েফার রপ্তানি হয়। এর মধ্যে পটাটা বিস্কুটের রপ্তানি ছিল ২০ শতাংশ বা ২ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এই এক ব্র্যান্ডের বিস্কুট দিয়েই বিস্কুট–ওয়েফার রপ্তানিকারক ১২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে প্রাণ–আরএফএল।